আধুনিক প্রযুক্তির কত কত অবদান। এর অবদান কি আমরা বলে শেষ করতে পারবো? প্রযুক্তি আমাদের কি না দিয়েছে। দিয়েছে সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, আমাদের বেঁচে থাকার সকল উপাদানের সহজলভ্য উপস্থিতি। কিন্তু তাই বলে কি এর কোন ক্ষতিকর প্রভাব নেই? হ্যাঁ, এর ক্ষতিকর প্রভাবও কম নয়। প্রযুক্তির সবচেয়ে ভয়ংকর অবদানগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান অবদান হচ্ছে মারণাস্ত্র। যার আবার অগ্রপথিক হিসেবে বিবেচিত হয় যুদ্ধ বিমান। বিশ্বযুদ্ধগুলো থেকে শুরু করে প্রতিটি যুদ্ধে কত ধরণের যে শত শত যুদ্ধ বিমান ব্যবহৃত হয়েছিল এবং হচ্ছে তার কোন ইয়াত্তা নেই। আজ আমি আপনাদের কাছে এ যুদ্ধ বিমানগুলোর জেনারেশন বা প্রজন্ম নিয়ে আলোচনা করবো । এক্ষেত্রে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে জেনারেশন বলতে কি বোঝায়? বর্তমানের যুদ্ধ বিমানগুলো বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে আজকের অবস্থানে এসেছে। পরিবর্তন ও বিকাশের এই একেকটি পর্যায় বা ধাপকে একেকটি প্রজন্ম বা ইংরেজিতে জেনারেশন বলা হয়। প্রতিটি প্রজন্মের মাঝেই বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে। আবার প্রতিটি প্রজন্ম পরিবর্তনের সময় এতে বেশ কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে আগের প্রজন্মের বৈশিষ্ট্যগুলোও নতুন প্রজন্মে বিদ্যমান থাকে। নিম্নে ছবির মাধ্যমে যুদ্ধবিমানের প্রজন্মগুলো তুলে ধরা হলো-
প্রথম প্রজন্মের সাবসনিক জেট ফাইটার
মোটামোটি ৪০ এর দশকের মধ্যবর্তী সময় থেকে ১৯৫০ সালের মাঝে যে যুদ্ধ বিমানগুলো ব্যবহৃত হতো সেগুলোকে প্রথম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান বলা হয়ে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এ ধরণের যুদ্ধ বিমানগুলো ব্যবহার করা হতো। এগুলো ছিল অত্যন্ত ধীরগতি সম্পন্ন। এরা আকাশে বেশি উপরে উঠতে পারতো না। এদের ইঞ্জিন ছিল দুর্বল এবং কার্য ক্ষমতা ছিল কম। এই প্রজন্মের বিমানগুলো একবারে বেশি দূর যেতে পারতো না। নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলতে ছিল সাধারণত কম ক্ষমতা সম্পন্ন হালকা মেশিনগান। এ প্রজন্মের বিমানের সহায়তায় পৃথিবীতে প্রথমবারের মতো পারমানবিক বোমা ব্যবহার করা হয়।(উপরের তিনটি বিমানের নাম যথাক্রমে Messerschmitt Me 262A, Gloster Meteor Mk III ExCC, F-86)
দ্বিতীয় প্রজন্মের জেট ফাইটার
প্রায় ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যবর্তী সময়ের যুদ্ধ বিমানগুলোকে দ্বিতীয় প্রজন্মের যুদ্ধবিমান বলা হয়ে থাকে। এ বিমানগুলো আগের প্রজন্মের চেয়ে বেশ দ্রুত গতিশীল। এ প্রজন্মে নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে রাডার পরিচালিত মিসাইল ব্যবহার করা শুরু হয়। এদের ডিজাইনে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করা হয়। ফলে এ প্রজন্মের বিমানগুলো আগের চেয়ে সাবলীল ও সুন্দরভাবে যুদ্ধ পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন করে।(উপরের তিনটি বিমানের নাম যথাক্রমে English Electric Lightning, Two Mirage III,
MiG-21F)
তৃতীয় প্রজন্মের জেট ফাইটার
মোটামোটি ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৭০ সালের মাঝের যুদ্ধ বিমানগুলোকে তৃতীয় প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান বলা হয়ে থাকে। এগুলো অত্যন্ত দ্রুত গতিশীল এবং প্রচন্ড শক্তিশালী। এরা রাডারকে ফাঁকি দিতে এবং আকাশ থেকে আকাশে কার্যকরী যুদ্ধ পরিচালনায় খুব পারদর্শী। এ প্রজন্মের বিমানগুলোকে বর্তমান প্রজন্মের পথিকৃত বলা হয়।(উপরের তিনটি বিমানের নাম যথাক্রমে F-4E Phantom, Chengdu J-7PG, Shenyang J-8)
চতুর্থ প্রজন্মের জেট ফাইটার
১৯৭০ সাল থেকে প্রায় ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি সময়ের জেট ফাইটার বিমানগুলো এ প্রজন্মের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রজন্মের বিমানগুলো প্রচন্ড দ্রুত গতিশীল এবং এরা আকাশ থেকে ভূমি, আকাশ থেকে আকাশ, আকাশ থেকে পানি যেকোন আবহে যুদ্ধে পারঙ্গম। এরা রাতের বেলাতেও সফলতার সাথে যুদ্ধ পরিচালনা করতে পারে। একেকবারে এ প্রজন্মের যুদ্ধ বিমানগুলো অনেক দূরের দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।(উপরের চারটি বিমানের নাম যথাক্রমে F-16 Fighting Felcon, Sukhoi Su-27 ‘Flanker’, Tornado, Mirage 2000)
৪.৫ এবং পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান
১৯৯০ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত সময়ের যুদ্ধ বিমানগুলো ৪.৫ প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ২০০৫ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত সময়ের যুদ্ধ বিমানগুলো পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান হিসেবে ধরা হয়। সর্বাধুনিক অস্ত্র, মিসাইল দিয়ে এ যুদ্ধ বিমানগুলো সজ্জিত। এগুলো একসাথে অনেকগুলো পারমানবিক বোমা বহনে সক্ষম। এ প্রজন্মে কিছু রোবট যুদ্ধ বিমানের প্রচলন সৃষ্টি হয়, যারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে শত্রু এলাকায় হামলা চালাতে পারে, এগুলোতে কোন চালকের প্রয়োজন হয় না। এ প্রজন্মের বিমানগুলো শব্দের চেয়ে কয়েকগুণ দ্রুত গতিতে উড়তে পারে। কিছু কিছু বিমান এতই দ্রুত উড়ে যে উড়ার সময় যে প্রচন্ড তাপের সৃষ্টি হয় তাতে এরা আকারে কয়েক ইঞ্চি পর্যন্ত প্রসারিত হয়। এদের ধবংস ক্ষমতা অকল্পনীয়।(উপরের ছয়টি বিমানের নাম যথাক্রমে Dassault Rafale, Eurofighter Typhoon, F/A-18E Super Hornet, F-22 Raptor, F-35, Sukhoi T-50)
এতো গেল ভয়ংকর মারণাস্ত্রগুলো সম্পর্কে একটি ক্ষুদ্র বর্ণনার প্রয়াস। এবার আসুন দেখি এই দানবগুলোর এবং এগুলো দ্বারা সংগঠিত যুদ্ধের কিছু ভয়ংকর ছবি (এখানে যে ছবিগুলো প্রকাশিত হলো এগুলো তাও অনেক কম ভয়ংকর, কিন্তু গুগলে খোঁজ করতে যেয়ে আমি এমন কিছু ছবি পেয়েছি যা দেখলে অনেকেই স্বাভাবিক থাকতে পারবে না, তাই বেছে বেছে কিছু ছবি এখানে তুলে ধরলাম)।
সবগুলোর মাঝে বিশেষ করে শেষের ছবিগুলো লক্ষ্য করুন। এ ছবিগুলো মধ্যপ্রাচ্যের গাজার ছবি। বলুন আমরা কি এরকম একটা ভয়ংকর পৃথিবী দেখতে চাই যেখানে একটি ছোট শিশুরও জীবনের নিরাপত্তা নেই, নেই বেঁচে থাকার সুন্দর একটি আশ্বাস! আমরা কি তবে এভাবেই বেঁচে থাকবো? আমার এ প্রশ্নটি শুধু আপনার কাছে নয়, বরং পৃথিবীর সকল দেশের ক্ষমতাবান সকল তথাকথিত গণ্যম্যন্য লোকদের কাছে যারা ইচ্ছা করলেই এ ধবংসাত্নক খেলা বন্ধ করতে পারে, আমাদের দিতে পারে একটি সুন্দর পৃথিবীর সুন্দর জীবনের আশ্বাস আর প্রযুক্তিকে করতে পারে কলঙ্কমুক্ত।
(তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া এবং ইন্টারনেট)
No comments:
Post a Comment