পত্রপত্রিকায় আমরা ফাইবার অপটিক এর কথা প্রায়ই শুনে থাকব৷ আর সবথেকে আলোচিত হল বঙ্গোপসাগরের অপটিক্যাল ফাইবার প্রকল্প, যা অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তিতে একটা বড় গুরুত্ব রাখবে৷ তথ্য প্রযুক্তিতে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি, কিন্তু বঙ্গোপসাগরের এই ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিশ্বের সাথে সংযুক্ত হলে আমরা আরো দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ পাব৷ কিন্তু এই অপটিক্যাল ফাইবার কি? কি তার বিশেষত্ব যা নিয়ে এত মাতামাতি হচ্ছে৷ যার অনেক রহস্য আমাদের অনেকেরই অজানা৷ প্রথমে এই ফাইবার অপটিক নিয়ে আলোচনা করব তারপরে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করব৷
অপটিক্যাল ফাইবার এর গঠন
মূলত অপটিক্যাল ফাইবার হল মানুষের চুলের মত খুব সু কাচের ফাইবার এর কথা৷ যা দিয়ে আলোর সিগনাল অনেক দূরে পাঠান সম্ভব৷ অপটিক্যাল ফাইবার খুব সু বিশেষ ধরনের গ্লাস ফাইবার দিয়ে তৈরী৷ আমরা সাধারণ যে কাচ দেখি, তার মূল উপাদান হল সিলিকন ডাইঅঙ্াইড৷ অণুগুলির বিশেষ বিন্যাসের জন্য কাচের ভিতরে আলো চলাচল করতে পারে, ফলে আমরা কাচ এর মাঝ দিয়েও কোন কিছু দেখতে পারি৷ কিন্তু কাচের ভিতর বিভিন্ন অনাকঙ্খিত উপাদান মিশে থাকার কারণে, আলো চলাচলে বাধা পায়৷ এই কারণেই কাচ যদি একটু মোটা হয় তবে অস্বচ্ছভাবে কোন কিছু দেখা যায় ও কাচকে সবুজ বলে মনে হয়৷ কিন্তু অপটিক্যাল ফাইবারে এই ধরনের অনাকাঙ্খিত উপাদান প্রায়ই থাকেনা, ফলে অনেক দূর পর্যন্ত আলো অপটিক্যাল ফাইবারের ভিতর দিয়ে চলাচল করতে পারে৷ অপটিক্যাল ফাইবার যে কত স্বচ্ছ তার তুলনা দিতে যেয়ে বলা যায়, যদি সাগরের উপরতলে আপনি দাড়িয়ে থাকেন, এবং সাগরটি যদি অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে তৈরী করা হয় তবে আপনি সমুদ্রের তলদেশ দেখতে পাবেন৷ নিম্নে একটি সাধারণ অপটিক্যাল ফাইবার এর গঠনের চিত্র দেয়া হল৷
অপটিক্যাল ফাইবার প্রধানত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত৷
Core : এটি হল মূল আলো চলাচলের পথ
Cladding : এই স্তরের কাচের প্রতিসরাংক কেন্দ্রপথের প্রতিসরাংকের থেকে বেশী৷
Buffer Cotting : এই স্তরটি বাহিরে ঘর্ষন থেকে ফাইবার অপটিককে রা করে৷
এছাড়া অপটিক্যাল ফাইবারের বাহিরে রবারের জ্যাকেট থাকে, যার ভিতরে অপটিক্যাল ফাইবার সুরতি থাকে৷
অপটিক্যাল ফাইবার এর প্রকারভেদ:
অপটিক্যাল ফাইবারের কোরের আকার অনুযায়ী দুই ভাগে বিভক্ত৷ ছোট আকারের কোরকে Single mode fiber বলে৷ এর কেন্দ্রপথের ব্যাস ৯ মাইক্রন (১ মিমি = ১০০০ মাইক্রন)৷ এর ভিতরে আলোর সিগনাল পাঠানোর জন্য লেজার আলো ব্যবহৃত হয়৷ লেজার আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১,৩০০ থেকে ১,৫৫০ নানোমিটার৷
এছাড়া বড় কোরের অপটিক্যাল ফাইবারকে Multi-mode fiber বলে৷ এর কোরের ব্যাস Single mode এর থেকে বড়, ৬২ মাইক্রন৷ এই েেত্র ইনফ্রারেড আলো ব্যবহৃত হয়৷ ইনফ্রারেড আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৮৫০ থেকে ১,৩০০ নানোমিটার৷ Light Emitting Diodes (LED) দিয়ে ইনফ্রারেড আলো পাঠান হয়৷ লেজারের থেকে এই লেড এর দাম তুলনামূলক ভাবে সস্তা৷ তবে লেজার এর ক্ষেত্রে আলোক তরঙ্গ খুব সুক্ষ৷
অপটিক ফাইবার এর ভিতর কিভাবে আলোর সিগনাল যায়?
এই ব্যাপারটা বুঝতে হলে আমাদের একটু কলেজের পদার্থবিজ্ঞান এর কাসগুলিতে ফিরে যেতে হবে৷ আমরা সেই সময় শিখেছিলাম, যে নদীতে আমরা যে মাছ দেখতে পাই তা মূলত মাছের সেই অবস্থান থেকে একটু উপরে দেখা যায়৷ মাছটিকে তার জায়গাতে না দেখার কারণ হল প্রতিসরাংক৷ যখন একটা মাধ্যম থেকে অন্যমাধ্যমে আলো প্রবেশ করে তখন তার দিক একটু পরিবর্তিত হয়, যাকে প্রতিসরাংক বলে৷ যদি প্রথম মাধ্যম থেকে দ্বিতীয় মাধ্যম এর ঘনত্ব কম কিংবা বেশী হয় তবে প্রতিসরিত কোনটি বেকে যাবে৷ কতটুকু বাড়তে তা দুটি মাধ্যমের প্রতিসরাংক ও কত কোণে দ্বিতীয় মাধ্যমে প্রবেশ করছে তার উপর নির্ভর করে৷
Critical Angle হল যখন বিশেষ কোণে আর আলোটি বাহির না হয়ে দুটির তল দিয়ে চলা শুরু করবে৷ এইক্ষেত্রে প্রতিসরিত কোণের মান হয় ৯০ ডিগ্রী৷ কিন্তু কোন কারণে যদি Critical Angle এর থেকে বেশী কোণে আলো প্রবেশ করে তবে আলোটি প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসবে৷ এইভাবে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসাকে বলে total internal reflection৷ সাধারণ আয়নার ক্ষেত্রে আলো ৯০% থেকে ৯৫% প্রতিফলিত হয়৷ কিন্তু অপটিক্যাল ফাইবার এর ক্ষেত্রে ১০০%ই প্রতিফলিত হয়ে আসে৷ সাধারণ অপটিক্যাল ফাইবারের কোরের প্রতিসরাংক প্রায় ১.৫৫ এবং Cladding এর প্রতিসরাংক প্রায় ১.৪৫৷ ফলে সাধারণ ফাইবার অপটিকের critical কোণ ৬৯ ডিগ্রী, তাই কোরের ক্ষেত্রে ৬৯ ডিগ্রী এর বেশী কোণে আলো প্রবেশ করে ফলে প্রতিক্ষেত্রে আলো প্রতিফলিত হয়ে আসে৷
যদি বুঝতে অসুবিধা হয়, তবে শুধু মনে রাখলে হবে যে আপটিক্যাল ফাইবার এর ভিতরের কোরের ভিতর দিয়ে আলো যাবার সময় তা বার বার আয়নার মত প্রতিফলিত হয়ে চলতে থাকে৷ এইভাবে বারবারই সব জায়গায় প্রতিফলিত হয়ে অপটিক্যাল ফাইবার এর ভিতর দিয়ে আলোর সিগনাল অনেকদূর যায়৷ আর এটাই অপটিক্যাল ফাইবার এর গোপন রহস্য৷ কোরের বাহিরের যে Cladding থাকে তাতে কোন আলো প্রবেশ করে না৷ তাই কেন্দ্রপথটি খুব নিখুঁত ফাইবার দিয়ে তৈরী করা হয়, যেন অনেকদূর যেতে পারে৷ কিন্তু তারপরেও ফাইবার এর সাথে বিভিন্ন অনাকাংখিত উপাদান মিশ্রিত থেকে যায়, তাই অনেক দীর্ঘ অপটিক্যাল ফাইবারের ক্ষেত্রে, পথমধ্যে Optical regenerator ব্যবহৃত হয়৷
ফাইবার অপটিক রিলে সিসটেম
অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে সিগনাল পাঠানো ও রিসিভ করার সম্পূর্ণ সিসটেম টিকে ফাইবার অপটিক রিলে সিসটেম বলে৷ এই সিসটেমটি নিম্নলিখিত কাঠামো দিয়ে তৈরী:
ট্রান্সমিটার : এটি কোন তথ্যকে আলোর সিগনাল এ রুপান্তর করে ও আলোর সিগনাল অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে পাঠানোর জন্য তৈরী করে৷ পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে লেজার ও LED আলো ব্যবহৃত হয়৷ সাধারণত ৮৫০, ১৩০০, ১৫০০ নানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো ব্যবহৃত হয়৷
অপটিক্যাল ফাইবার : এটি মূল আপটিক্যাল ফাইবার, যার ভিতর দিয়ে আলো চলাচল করে৷
অপটিক্যাল জেনারেটর : সাধারণত খুব দীর্ঘ অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্যে ব্যবহৃত হয়, আলোর তরঙ্গকে শক্তিশালি করবার জন্য ব্যবহৃত হয়৷ পূর্বেই বলেছি যে কেন্দ্রপথের ফাইবারে বিভিন্ন অনাকঙ্খিত উপাদান মিশে থাকার কারণে আলো চলবার পথে বাধাপ্রাপ্ত হয়৷ তাই অপটিক্যাল ফাইবার এর দৈর্ঘ প্রায় ১ কিলোমিটার এর বেশী বড় হলে আলোর তরঙ্গগুলিকে শক্তিদিয়ে আলো দূরে পাঠানোর জন্য এই অপটিক্যাল জেনারেটর ব্যবহৃত হয়৷ মূলত এই অপটিক্যাল জেনারেটর এক ধরনের লেজার এম্পিফায়ার এবং এটি ভিতরের প্রবাহমান লেজার আলোকে আরো শক্তি প্রদান করে এবং তা আরো বহুদূর যেতে পারে৷ আপনারা অনেকেই সমুদ্রের নিচ দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার এর কথা শুনে থাকবেন, সেেেত্র এই অপটিক্যাল জেনারেটর এর প্রয়োজন হয়ে থাকে৷
অপটিক্যাল রিসিভার : এটি আলোর তরঙ্গ গ্রহণ করে এবং আলোর সিগনালকে সাধারণ বিদু্যত সিগনালে রুপান্তরিত করে৷ সাধারণত ফটোসেল কিংবা ফটোডায়োড দিয়ে এটি তৈরী৷ যা আলো সেন্সর হিসাবে কাজ করে এবং তা বিদ্যুত সিগনালে পরিনত করে৷
অপটিক্যাল ফাইবার এর সুবিধাসমূহ:
আমাদের ব্যবহারিক যোগাযোগ ব্যবস্থাতে অপটিক্যাল ফাইবার এক নতুন যুগের সূচনা করেছে৷ সাধারণ যোগাযোগ ব্যবস্থাতে অনেকেেত্রই অপটিক্যাল ফাইবার প্রতিস্থাপিত হচ্ছে৷ এতদিন পর্যন্ত শুধুমাত্র বড় বড় টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিগুলিতেই এই অপটিক্যাল ফাইবার ব্যাবহৃত হলেও, বর্তমানে সাধারণ বাসাতেও এই অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহৃত হচ্ছে৷ যেমন আপনার বাসার ডিভিডি প্লেয়ার এর ক্ষেত্রে হয়তো এই অপটিক্যাল ফাইবারের সংযোগের ব্যবস্থা থাকতে পারে৷ সেই দিন আর খুব একটা বেশী দূরে নেই যখন প্রতিটি বাসাতেই অপটিক্যাল ফাইবার এর প্লাগ লাগানো থাকবে৷ ভবিষ্যতে কেউ বাসা নিতে গেলে গ্যাস-বিদু্যতের সংযোগ এর পাশাপাশি অপটিক্যাল ফাইবার এর সংযোগ আছে কিনা তা জানতে চাইবে৷ ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য এতদিন টেলিফোন ও আইএসপি ব্যবস্থা কাজ করলেও অপটিক্যাল ফাইবার ব্যাবহার করলে ব্যাবহারকারীরা পাবে দ্রুত ইন্টারনেট বাবস্থা৷ জাপানে নতুন যেসব এপার্টমেন্ট ও বাড়ি তৈরী হচ্ছে তাতে এই অপটিক্যাল ফাইবার এর ব্যবস্থা থাকছে৷
এইবার দেখা যাক এই অপটিক্যাল ফাইবার এর সুবিধাসমূহ৷
১. খরচ কম : সাধারণত যে কপার (তামার) তার ব্যবহৃত হয় তার থেকে এই অপটিক্যাল ফাইবারের খরচ অনেকগুন কম৷
২. কম প্রস্ত : কপার তারের তুলনায় অপটিক্যাল ফাইবারের প্রস্ত অনেকগুন কম৷ ফলে একসাথে অনেকগুলি অপটিক্যাল ফাইবার তার লাগান যায়, এবং তাতে কপার তারের তুলনায় অনেক গুন বেশী সিগনাল পাঠান সম্ভব৷
৩. সিগনাল বহন মতা বেশী : একটি কপার তার দিয়ে শুধু মাত্র একটি সিগনাল পাঠান সম্ভব৷ মনে করুন আপনি যখন ফোনে কথা বলেন, তখন সেই টেলিফোনের তার দিয়ে শুধু মাত্র আপনি একাই কথা বলতে পারবেন৷ কিন্তু তা যদি অপটিক্যাল ফাইবার হয়, তবে তা দিয়ে অনেকজন কথা বলতে পারবে৷ সাধারণ অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে বর্তমানে ১০ গিগাবাইট/সেকেন্ড এর সিগনাল পাঠান সম্ভব৷ ফলে আগামি দিনগুলিতে যে ব্রডবান্ড ইন্টারনেট এর কথা শোনা যায়, সেত্রে এই অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহৃত হবে৷
৪. সিগনাল কম নষ্ট হয় : কপার তারের তুলনায় অপটিক্যাল ফাইবার এর ভিতর সিগনাল লস কম৷ একেবারেই নেই বল্লেই চলে৷
৫. আলো সিগনাল : ফাইবার অপটিকে আলোক তরঙ্গ ব্যবহার হবার কারণে একটির সাথে অন্যটির মিশ্রন হয়ে যাবার সম্ভাবনা নেই৷ ফলে যদি ফাইবার অপটিক দিয়ে টেলিফোনে কথা বলেন তবে স্পষ্ট কথা শুনতে পাবেন৷ সাধারণ কপার তারের টেলিফোনে অনেক সময় অস্পষ্ট কথা শোনা যায়৷
৬. কম পাওয়ার : সাধারণ কপার তার দিয়ে অনেকদূরে সিগনাল পাঠবার ক্ষেত্রে অনেক বেশী ভোল্টের দরকার হয়৷ কিন্তু অপটিক তারের েেত্র কম পাওয়ার এর প্রয়োজন হয়৷ এবং লেজার এর ক্ষেত্রে কম পাওয়ার এ অনেকদূর আলো তরঙ্গ পাঠান সম্ভব৷
৭. ডিজিটাল সিগনাল : অপটিক্যাল ফাইবার এর ক্ষেত্র ডিজিটাল সিগনাল ব্যবহার করা হয়, যা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কিংবা এই ধরনের ক্ষেত্রে সুবিধা হয়৷
৮. অগি্নপ্রতিরোধক : কপার তারের ক্ষেত্রে অনেক সময় বেশী ভোল্ট এর কারণে আগুন লেগে যাবার সম্ভাবনা থাকে৷ অনেক আগুন লেগে যাবার কারণ বিশ্লেষন করে দেখা গেছে তার অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে যাবার কারণে আগুন লেগে গেছে৷ অপটিক্যাল ফাইবার এর ক্ষেত্রে উত্তপ্ত হয়ে যাবার সম্ভাবনা নেই, তাই কপার তারের তুলনায় অনেক নিরাপদ৷
৯. হালকা : সাধারণ কপার তারের তুলনায় ফাইবার দিয়ে তৈরী বলে অনেকগুন হালকা৷
এই সমস্ত সুবিধাগুলির কারণেই অপটিক্যাল ফাইবার এত জনপ্রিয় হচ্ছে৷ আমাদের বর্তমান টেলিযোগাযোগ এর ক্ষেত্রেও এই ফাইবার অপটিকস ব্যবহৃত হচ্ছে৷ যেমন, বাংলাদেশের মোবাইল কম্পানিগুলি রেলওয়ের অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করছে৷
বাংলাদেশ ও ফাইবার অপটিক কেবল
বাংলাদেশের মূলত মাইক্রোওয়েভ স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে বহিঃবিশ্ব এর সাথে যুক্ত৷ স্যাটেলাইট সংযোগ অত্যন্ত ব্যায়বহুল৷ বাংলাদেশে মোট দুটি A স্টান্ডার্ড এর স্যাটেলাইট আছে, তা হল চট্রগ্রামের বেতবুনিয়া ও ঢাকার মহাখালিতে৷ ঢাকা থেকে ৩০ কিমি দূরে তালিবাবাদে B স্ট্যান্ডার্ড ও সিলেটে রয়েছে C স্টান্ডার্ড এর স্যাটেলাইট স্টেশন রয়েছে৷
কিন্তু উন্নত বিশ্বের সব দেশই স্যাটেলাইটের পাশাপাশি ফাইবার অপটিক কেবল এর মাধ্যমে সংযুক্ত৷ আমেরিকা ইউরোপ অট্রেলিয়া ও অন্যান্য মহাদেশগুলি পরষ্পর সাগরের তলদেশ দিয়ে ফাইবার অপটিক কেবলের সাথে সংযুক্ত৷ কেননা তথ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে চ্যানেল প্রতি এর খরচ স্যটেলাইটের তুলনায় অনেক গুন কম পড়ে৷ ফাইবার অপটিক দিয়ে দ্রুত যোগাযোগ করা সম্ভব৷ প্রথম সাবমেরিন কেবল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৬ সনে যার নাম Trans-Atlantic (TAT-1)| এটি সাধারণ টেলিফোন কেবল কিন্তু TAT-8 নামে প্রথম ফাইবার অপটিক এর সাবমেরিন কেবল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৩ সনে৷ এটির ফলে আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝ দিয়ে ৩৫ হাজার টেলিফোন সংযোগ সম্ভব৷ বঙ্গোপসাগরের তলদেশ দিয়ে তিনটি সাবমেরিন কেবল প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, SMW2, SMW3, FLAG| এর মধ্যে সবথেকে আলোচিত হল SEA-ME-WE3 (South East Asia, Middle East, Western Europe)| ১৯৯০ এর দিকে এই SEA-ME-WE3 নিয়ে আলোচনা শুরু হয়৷ দূর্ভাগ্যবসত বাংলাদেশ এই SEA-ME-WE3 তে অংশ গ্রহণ করেনি৷ এই ব্যাপারে পত্র-পত্রিকাগুলিতে অনেক লেখালেখি হলেও তত্কালীন সরকার এই ব্যপারে কোন ভূমিকা রাখেনি৷
১৯৯৬ সন থেকে বাংলাদেশে ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরিন বড় বড় শহরগুলিকে সংযুক্ত করবার পদপে শুরু হয়৷ ঢাকার মগবাজার ও গুলশানের টেলিফোন এঙ্চেঞ্চের মধ্যে প্রথম ফাইবার অপটিক সংযোগ স্থাপন করা হয়৷ বর্তমানে শহরগুলিতে আন্ত:এঙ্চেঞ্চগুলির মধ্যে ফাইবার অপটিক সংযোগ আছে৷ ২০০১ সনে ঢাকা ও চট্রগ্রামের মধ্যে STM-16 প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এছাড়া অন্যান্য অঞ্চলগুলি ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের চিত্র দেয়া হল৷ (PDF ফাইল দেখুন)
ভবিষ্যতে SEA-ME-WE-4 প্রকল্পে বাংলাদেশ সংযুক্ত হবে বিশ্বের ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের সাথে৷ সেটা সম্ভব হলে বাংলাদেশ ১০ গিগাবাইট/সেকেন্ড এর মত দ্রুত গতিতে বিশ্বের সাথে সংযুক্ত হবে৷ এবং তাতে বিনামূল্যে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, শ্রিলংকা, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদিআরব, ইজিপ্ট, ইতালি ও ফ্রান্সে ল্যান্ডিং একসেস পাবে৷
২০০২ সনের ১-৩ রা জুলাইয়ে দুবাইতে প্রথম এই ১২ টি দেশের SEA-ME-WE-4 মিটিং হয়৷ ৪ই সেপ্টেম্বর জাকার্তাতে বাংলাদেশ BTTB (Bangladesh Telegraph and Telephone Board) SEA-ME-WE-4 Memorandum of understand (MoU) তে সাক্ষর করে৷ আশা করা হচ্ছে যে ২০০৫ এর প্রথম দিকে এই প্রকল্প সমাপ্ত হবে৷ তখন আমাদের আর আগের মত VSAT দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবেনা৷ জনগন সত্যিকারের ব্রডব্যান্ড এর অর্থ উপলব্ধি করতে পারবে৷ SEA-ME-WE-4 তে Dense Wavelength Devision Multiplexing (DWDM) পদ্ধতি ব্যবহার করে ফলে প্রতিসেকেন্ডে ১.২৮ টেরাবাইট তথ্যসরবরাহ করা সম্ভব৷ বর্তমানে এই সংক্রান্ত টেন্ডার এর কাজ শুরু হয়ে গেছে৷
অবশ্য এতটুকু পথ আসতে বাংলাদেশকে অনেক চড়াই উত্রায় পার হয়ে আসতে হয়েছে৷ অন্যান্য বেশ কয়েকটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান অন্যান্য সাবমেরিন কেবল এ সংযুক্ত হবার জন্য বাংলাদেশকে বিভিন্ন ভাবে চাপ দিয়ে আসছিল৷ কিন্তু SEA-ME-WE-4 তে সংযুক্ত হবার কারণে আমরা খুব কম মূল্যে অনেক দ্রুত সংযোগ পাব৷ এেেত্র বাংলাদেশের মোট খরচ হবে ৩০ মিলিয়ন ডলার ও এজন্য বঙ্গোপসাগরে আমাদের মোট ১২৪০ কিমি ফাইবার অপটিক সংযোগ দিতে হবে৷ আমাদের স্বপ্নের সাবমেরিন কেবল এইবার সত্যিই সম্ভব হবে৷
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment