Sunday, April 4, 2010

বাংলাদেশ ব্যাংকে বাড়ছে প্রযুক্তি সেবা

বিশ্বায়নের এই যুগে আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার৷ শুধু উন্নত দেশ নয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার৷ এরই ধারাবাহিকতায় দেশের ব্যাংকিং খাতে লেগেছে তথ্যপ্রযুক্তির হাওয়া৷ সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংককে ডিজিটাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রূপ দেয়ার জন্য পাঁচ বছরের একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিটি স্তরেই প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে৷ এর মধ্যে আছে মনিটরি পলিসি ,তদারকি ব্যবস্থা, অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা৷ উল্লেখ্য, ইতোমধ্যেই চালু হয়েছে ই-কমার্স, ই-ব্যাংকিং সহ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউজের ব্যবস্থা৷ বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ডক্টর আতিউর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল রূপে আসতে ৫ বছরের একটি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে৷ বিশ্ব মানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পরিণত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও জোর দিতে হবে৷

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে কাগজের ব্যবহারবিহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে-

ই-কমার্স
বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রযুক্তির প্রচলনের প্রথম ধাপেই ই-কমার্স চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ এই ব্যবস্থা চালুর মধ্য দিয়ে অনলাইনেই অর্থের আদান-প্রদান, প্রয়োজনীয় বিল পরিশোধ, আমদানি-রপ্তানি, ফান্ডের স্থানান্তর, অনলাইন ক্রেডিট কার্ড, স্থানীয় মুদ্রা সরবরাহের মতো জটিল কাজগুলো সহজেই করা যাবে৷

ই-পেমেন্ট
ই-কমার্স ছাড়াও ব্যাংকের গ্রহণ করা প্রযুক্তি সেবার মধ্যে ই-পেমেন্ট বা নগদ অর্থের আদান-প্রদান অন্যতম৷ এখন এন্টি-মানিলন্ডারিং আইনসহ এই সংক্রান্ত অন্যান্য আইন মেনেই লেনদেন করা হচ্ছে৷ বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে অর্থের আদান প্রদান ও সরবরাহ হয়ে গেছে অনেক সহজ৷ এর ফলে ভবিষ্যতে ইলেকট্রনিক ফান্ড স্থানান্তর এর কাজটিও সহজেই করা সম্ভব হবে৷

রেমিটেন্স
সম্প্রতি চালু করা 'ইনস্টলেশন অফ বাংলাদেশ অটোমেটেড কিয়ারিং হাউজ' (বিএসিএইচ) বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা বলেই দাবি করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ৷ এতে রেমিটেন্স চ্যানেল ও পেমেন্ট পদ্ধতিকে সহজ করা সম্ভব৷ এই পদ্ধতি ২০০৯ এর নভেম্বরে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়৷ এই পদ্ধতিতে চেক দিয়ে ব্যাংক থেকে অর্থ তুলতে সরাসরি উপস্থিত হবার প্রয়োজন হয় না৷ এতে চেকের তথ্য বাংলাদেশ অটোমেটেড চেক প্রসেসিং সিস্টেমে (বিএসিপিএস) একটি নিরাপদ সংযোগ পথ তৈরি করবে৷

চেক

প্রচলিত নতুন চেকগুলোতে থাকছে ম্যাগনেটিক ইঙ্ক ক্যারেক্টার রিকগনিশন (এমআইসিআর) লাইন যা ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট বিষয়ক সকল তথ্য ধারণ করে রাখতে পারবে৷ এই পদ্ধতিতে সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি বাড়বে নিশ্চয়তাও৷

মোবাইল ব্যাংকিং
মোবাইল ফোন অপারেটরদের মতে, সেলফোন ব্যবহার করে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ব্যংক৷ মোবাইল ব্যবহারকারী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে চুক্তিকারী বিভিন্ন অপারেটরের সংযোগসহ মোবাইল সেট ব্যবহার করেই নিজস্ব অ্যাকাউন্টের তথ্য জানা সম্ভব হবে৷ ইতোমধ্যেই তিনটি কমার্শিয়াল ব্যাংক এই মোবাইল ব্যাংকিং চালু করেছে৷ বাংলাদেশ ব্যাংক দেশব্যাপী কৃষি ও এসএমই লোনের তদারকি ও খোঁজখবর রাখতে এই সেবা চালু করেছে৷

সিআইবি
অনলাইন ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি বছরে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট নিয়ে একটি ডেটাবেজ তৈরি করা হবে এবং সেসব উপাত্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাজে লাগবে৷

নেটওয়ার্ক স্থাপন
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পূনর্গঠন করার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মিলিয়ে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ এর মধ্যে আছে নেটওয়ার্কিং, ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশন, এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং সলিউশন, এন্টারপ্রাইজ ডেটা ওয়্যারহাইজ ইত্যাদি ব্যবস্থাকে একটি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার মধ্যে আনা হয়েছে৷ এতে বাংলাদেশ ব্যাংক এর প্রধান অফিসের সব শাখা ও অন্যান্য নয়টি শাখার সব কম্পিউটার একটি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার মধ্যে আনা হয়েছে যার ফলে প্রায় ৩ হাজার কম্পিউটারকে একত্রে যুক্ত করা সম্ভব হয়েছে৷

এন্টারপ্রাইজ রিসোর্সেস প্ল্যানিং
ইআরপি-এর মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ই-প্রোকিউরমেন্ট, ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট, অ্যাকসেস কন্ট্রোলসহ সব পরিবর্তন করা যাবে৷ এমনকি ব্যাংকের নিয়োগ বিধিও ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করা হচ্ছে৷

এন্টারপ্রাইজ ডাটা ওয়্যারহাউজ
এটি একটি ইলেকট্রনিক ডেটা ব্যাংক তৈরি করে যা অর্থ বিষয়ক সব তথ্যের যোগান দেবে৷ এটি ব্যবহার করে ব্যাংকের নীতি বিশ্লেষণ করা যাবে৷

ই-টেন্ডার

বাংলাদেশ ব্যাংক ওয়েবভিত্তিক ই-টেন্ডারিং সিস্টেম চালু করছে৷ ফলে টেন্ডার ঘোষণা, শিডিউল বিতরণ, নিলামসহ সবকিছু অনলাইন কার্যক্রমের আওতায় আনা হচ্ছে৷

অন্যান্য কার্যক্রম
বাংলাদেশ ব্যাংক এর অধীনে থাকা অন্যান্য ব্যাংক ও অর্থনৈতিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রমও তদারকি করছে৷ এছাড়াও সৌরশক্তি ব্যবহার করে গ্রিন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে উত্‍সাহ ও বিভিন্ন সাহায্য দিচ্ছে৷

ব্যাংকের গভর্ণর আরো বলেন, 'দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংককে কাগজের ব্যবহারহীন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনলাইন ভিত্তিক করা হবে৷ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে কৃষি ও এসএমই খাতে তথ্য ও যোগাযোগ খাতকে ব্যবহার করা হবে৷ এটিকে স্বয়ংক্রিয় করতে এর মধ্যেই নেয়া হয়েছে বিভিন্ন ব্যবস্থা'৷

'জাতীয় প্রবৃদ্ধির ফসল আমরা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই'৷ আর সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়াকে ঐতিহাসিক একটি পদক্ষেপ বলেই জানিয়েছেন তিনি৷ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অর্থনৈতিক উন্নতি আনতে ব্যাংকে ডিজিটালাইজ জরুরী৷ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি ও এসএমই খাতের সম্প্রসারণে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে বা নাগাল পেতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করেছে৷

বিশ্বে ব্যাংকিং খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে উন্নততর হচ্ছে ব্যাংকিং খাত৷ এক্ষেত্রে বাংলাদেশেও পিছিয়ে থাকার কোন অবকাশ নেই৷ কেন্দ্রিয় ব্যাংকের নেয়া সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশ্বমানের ব্যাংকে পরিণত করা হবে৷


ই-বিজ

No comments:

Post a Comment