Sunday, April 4, 2010

'এশিয়া- ওশেনিয়া ভিশন ২০২০: এনাবলিং আইটি লিডারশিপ থ্রো কোলাবোরেশন' শীর্ষক রিপোর্টে প্রকাশ - তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় নেতৃত্ব দেবে এশিয়া

কয়েক বছর আগেও শব্দদ্বয় ছিলো ইনফরমেশন টেকনোলজি, সংক্ষেপে আইটি৷ বাংলা করলে যার অর্থ দাঁড়ায় তথ্য-প্রযুক্তি৷ কিন্তু ইদানিং তথ্য আর প্রযুক্তির সাথে যোগ হয়েছে কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ শব্দটি৷ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে তথ্যের অবাধ প্রবাহ, আর তার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মানুষগুলোকে কেন্দ্রীয়করণ অর্থাত্‍ অভিন্ন এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার যে প্রয়াস তারই শাব্দিক রূপ ইনফরমেশন কমিউনিকেশন টেকনোলজি, সংক্ষেপে আইসিটি বা তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি৷

আইসিটি শব্দটি শুনলে প্রথমেই মনে আসে পাশ্চাত্য দুনিয়ায় এর বিশাল বাজার, ক্রমবর্ধনশীল ব্যবহার, উত্তোরোত্তর উন্নতি ইত্যাদি ইত্যাদি৷ এক ঝলকে মনে হতেই পারে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রথম বিশ্বের দেশগুলোই বিশ্বজুড়ে লাঙল চালাচ্ছে৷ কিন্তু আইসিটি'র আজকের অবস্থানের পেছনে অত্র এশিয়া মহাদেশের যে বিশাল অবদান রয়েছে এবং আসন্ন সময়ে সারাবিশ্বে লাঙল চালনার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে তার সে খবর কেই-বা রাখে বলুন? না, মিথ্যা সান্তনা নয়, যা বলা হচ্ছে তা একশত ভাগ খাঁটি সত্য৷

সম্প্রতি 'এশিয়ান-ওশেনিয়ান কম্পিউটিং ইন্ডাস্ট্রি অর্গানাইজেশন' (এএসওসিআইও) তথা এসোসিও প্রকাশিত এক রিপোর্টে এমন সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়৷ 'এশিয়া-ওশেনিয়া ভিশন ২০২০: এনাবলিং আইটি লিডারশিপ থ্রো কোলাবোরেশন' শিরোনামের এই রিপোর্টটি তৈরি করেছে বিশ্বখ্যাত প্রোফেশনাল সার্ভিসেস ফার্মস 'কেএমপিজি'৷ কেএমপিজি বিশ্বের ১৪৬টি দেশের প্রায় দেড় লাখ প্রোফেশনাল নিয়ে গঠিত একটি সংগঠন যারা অডিট, ট্যাক্স ও অ্যাডভাইজরি সার্ভিস নিয়ে কাজ করে৷ রিপোর্টটি তৈরিতে কেএমপিজি এসোসিও'র ২০টি সদস্য দেশের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করেছে৷ নানা রকম তথ্য-উপাত্তের সমন্বয়ে এই রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়৷

যা বলা হয়েছে রিপোর্টে
এশিয়া বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি৷ চীন, জাপান ও ভারতের মতো সুদৃঢ় এবং স্থিতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থার তিনটি দেশ এই মহাদেশে বিদ্যমান৷ ২০০৫ সালে সারাবিশ্বের মোট প্রবৃদ্ধির ৩৫.৭ শতাংশ ছিলো এশিয়া মহাদেশের কল্যাণে, ১৯৮০ সালে যার পরিমাণ ছিলো মাত্র ১৯ শতাংশ৷ তবে ২০২০ সাল নাগাদ এই পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ৪৩.২ শতাংশে৷ গত দশকে বিশ্বের অর্থৈনৈতিক উন্নতির প্রায় অর্ধেক হয়েছে এশিয়া মহাদেশের কল্যাণে৷ গত দশকে, এমনকি চলতি বিশ্বমন্দার সময়েও এশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা ছিলো তুলনামূলকভাবে অনেক গতিশীল৷ ২০০৬ থেকে আসন্ন ২০২০ সাল পর্যন্ত এক হিসাবে দেখা গেছে এশিয়া'র পার ক্যাপিটা গ্রোথ-এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৪.৯ শতাংশ৷ ইউরোপ ও আমেরিকার ক্ষেত্রে এই পরিমাণ হবে যথাক্রমে ২.১ ও ২.৯ শতাংশ৷ এশিয়ার মাথাপিছু আয়ের পরিমাণও বর্তমানের ৪৭৭৫ ইউএস ডলার (রিপোর্ট তৈরির সময়কার সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী) থেকে বেড়ে হবে ৮৪৭৬ ইউএস ডলার৷ এশিয়ার অধিকাংশ দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এবং নব্বই শতাংশ মানুষ দেশেই বসবাস করবে৷ বিশ্বজুড়ে রপ্তানি ক্ষেত্রে এশিয়া'র অবদান থাকবে এক-তৃতীয়াংশ৷ ১৯৮০ সালে এর পরিমাণ ছিলো ১৪ শতাংশ, ২০০৬ সালে ২৭ শতাংশ এবং ২০২০ সাল নাগাদ হবে ৩৫ শতাংশ৷ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণও বাড়বে৷ ১৯৮০ ও ২০০৬ সালে এর পরিমাণ ছিলো যথাক্রমে ৫.৯ ও ১১.৪ শতাংশ৷ ২০২০ সালে এর পরিমাণ ২০ শতাংশ হবে বলে রিপোর্টে আশা করা হয়৷

২০২০ সাল নাগাদ আইসিটি ক্ষেত্রে এশিয়ার উন্নতি একটি উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে পেঁৗছাবে৷ প্রস্তুতকরণ, প্যাকেজিং, রপ্তানি ও অন্যান্য আইসিটি সেবায় এশিয়ার অবদান থাকবে সিংহভাগ৷ কনজু্যমার হিসেবে আগামী দশকে এশিয়ার প্যানিট্রেশন কমবে৷ অর্থনৈতিক উন্নতি হবে দ্রুতগতিতে৷ ব্যবসা ক্ষেত্র এবং ব্যক্তিপর্যায় থেকেও এর আদান হবে৷ আইসিটি সেক্টর ক্রমশই শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ সমাজকল্যাণেও এর ব্যবহার বাড়ছে দিনকে দিন৷ উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের দারিদ্র্যতা এবং অশিক্ষার হার কমাতে আইসিটির ব্যবহার বাড়াচ্ছে৷ বিশ্বায়নের এই যুগে ই-বিজনেস বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে৷ পাশপাশি প্রস্তুতকরণ ও সরবরাহকারী হিসেবেও এশিয়া ২০২০ সাল নাগাদ উল্লেখযোগ্য অবস্থায় পেঁৗছাবে৷ বিশ্বের আইসিটি সরবরাহকারীদের মধ্যে এশিয়ার দেশগুলো নেতৃত্ব দেবে৷ হার্ডওয়্যার ও আইটি-বিপিও তৈরিতে এশিয়ার অবস্থান হবে সুদৃঢ়৷ এবং তা উপরিতল থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত হবে৷ যদিও আইসিটি পণ্য তৈরিতে এশিয়ার একাধিক দেশ ইতোমধ্যেই একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে৷ ১৯৬০ সাল থেকে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান বর্তমান আইসিটি পণ্যের বাজার প্রায় দখলে নিয়ে আছে৷ হংকং, চীন, সিঙ্গাপুর ১৯৮০ সালের পর থেকে আইসিটি পণ্য তৈরিতে সুনাম অর্জন করেছে৷ সেই ধারাবাহিকতায় এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোও এগিয়ে যাচ্ছে৷ চলতি শতাব্দিতে চীন, মালয়েশিয়া ও ভারত নিবিড়ভাবে আইসিটি পণ্য তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে৷ সার্বিক বিবেচনায় এশিয়ার দেশগুলো তথ্য-নির্ভর অর্থনীতি তৈরি করছে৷

প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে প্রথম থেকেই বাজার অর্থনীতি তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগ, সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণ, আমদানি ক্ষেত্রে শিথিলতা ইত্যাদিকে প্রাধান্য দিয়ে৷ নানারকম প্রতিবন্ধকতার পরেও ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গড় জিডিপি ছিলো ৬ শতাংশের ওপরে৷ ১৯৯১ সালের দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৫৯ শতাংশ থেকে ২০০৫ সালে এসে দাঁড়িয়েছিলো ৪০ শতাংশে৷ পরবর্তীতে তা আরো কমেছে৷ তারপরও বর্তমানে পাঁচ কোটির বেশি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে৷ আর ২০০৯ সালে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিলো ৬৯০ ইউএস ডলার৷ জিডিপির ক্ষেত্রে সার্ভিস সেক্টর থেকে আসে ৫২ শতাংশ, কৃষি ক্ষেত্র থেকে ১৯ শতাংশ এবং শিল্পখাত থেকে আসে ২৯ শতাংশ৷ আইটি-বিপিও শিল্পে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেক উজ্জ্বল৷ তবে রয়েছে সমস্যাও৷ দেশের ৬৩ শতাংশ মানুষ আছে কর্মক্ষম বয়সসীমার (১৬ থেকে ৬৪ বছর) মধ্যে৷ যা আইটি-বিপিও'র জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ বাংলাদেশে প্রায় ৬০টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার আইটি গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছে, যার মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার৷ কিন্তু তারপরও এই শিল্পে প্রতিবছর ১৮০০ থেকে ২৬০০ প্রফেশনালের অভাব থাকে৷ শিক্ষার মান সময় ও বাজার উপযোগী না হওয়ার ফলে অনেক শিক্ষার্থী পাস করেও চাকরি পায় না৷ বর্তমানে প্রায় পাঁচ কোটি মোবাইল ফোন গ্রাহক রয়েছে৷ তবে গ্রামাঞ্চল খুব দ্রুত মোবাইল ফোনের আওতায় আসতে থাকায় বাড়ছে প্রযুক্তি সেবার হার৷ কম্পিউটার ব্যবহারের হার অনেক কম৷ প্রতি হাজার মানুষের জন্য কম্পিউটার ব্যবহারের হার মাত্র ৪.৫টি৷ ইন্টারনেট ব্যবহারের হার আরও অনেক কম৷ মার্চ ২০০৮ এ এর পরিমাণ ছিলো ০.৩ শতাংশ৷ তখন মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিলো ৫০ লাখের মতো৷ আইসিটি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও রিসোর্সের একটি বড় ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশে৷ পাশাপাশি ঝুঁকির কারণে বিদ্যমান অংশটুকুও কাজ করতে পারছে না৷ বিদু্যত্‍ ঘাটতি অন্যতম একটি সমস্যা৷ প্রায় ২০০০ মেগাওয়াট বিদু্যতের ঘাটতি রয়েছে এখনও৷ তারপরও সরকারের কিছু উদ্যোগ এখানে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে৷ যেমন কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও এক্সসেরিজ আমদানিকে ট্যাক্সরে আওতামুক্ত রাখা৷ ২০০৯-১০ অর্থ বছরে ৩৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার এসেছে এই খাতের রাজস্ব থেকে, যা তুলনামূলকভাবে কম৷ হাতে গোনা কয়েকটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান মানসম্পন্ন সফটওয়্যার রপ্তানি করলেও, এর বাইরে একশ'র বেশি প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার ও এই ক্ষেত্রে তাদের অন্যান্য সেবা প্রদান করে আসছে৷ 'ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ডুয়িং বিজনেস সার্ভে' ২০১০ অনুযায়ী বিশ্বের ১৮৩ টি ব্যবসায়ী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৯৷ এই দেশে কোনো ব্যবসা শুরু করতে সব মিলিয়ে কমপক্ষে ৪৪ দিন সময় লাগে৷ যা এশিয়ার ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ২৮.১ দিনের চেয়ে অনেক বেশি৷ বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ তথা 'ভিশন ২০২১' সফল করতে গেলে এই রিপোর্টের 'ভিশন ২০২০' সফল করা জরুরি৷ এর জন্য প্রয়োজনীয় রিসোর্সও রয়েছে এখানে৷ সফলতার জন্য দেশের অভ্যন্তরীন মার্কেট যেমন রয়েছে, পাশাপাশি আছে বর্হিবিশ্বের সুবিধা৷ তবে দক্ষ জনবল ও দুর্বল অবকাঠামো এই ক্ষেত্রে অনেক বড় দুর্বলতা৷ একই সাথে সমন্বিত চেষ্টার অভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে একটা ঝুঁকিও রয়েছে৷

সাক্ষাতকার

সমন্বিত চেষ্টা থাকলেই কেবল এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব
আবদুল্লাহ এইচ কাফি
ডেপুটি প্রেসিডেন্ট, এশিয়ান-ওশেনিয়ান কম্পিউটিং ইন্ডাস্ট্রি অর্গানাইজেশন (এসোসিও)
কেএমপিজি কর্তৃক প্রস্ততকৃত এই রিপোর্টটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বিশ্লেষণভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে৷ এখানে আইসিটি ক্ষেত্রে এশিয়া মহাদেশের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়েছে৷ বিশ্ব আইসিটি বাজারে নেতৃত্ব দেয়ার মতো সক্ষমতা রয়েছে এশিয়ার৷ রিপোর্টে তা-ই উঠে এসেছে৷ শুধু আইসিটি ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতেও এর যথেষ্ট অবদান রাখার সম্ভাবনা রয়েছে৷ নানা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই রিপোর্টে এই সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে৷ এশিয়ার এই অবদানে বাংলাদেশের অংশ নেয়ার জন্যও বড় জায়গা আছে৷ এমনকি অন্যান্য কিছু দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সুযোগ রয়েছে অনেক বেশিই৷ তবে সম্ভাবনা আর প্রত্যাশার প্রতিফলন বাস্তবায়ন করতে গেলে অত্যাবশ্যকীয় কিছু পদক্ষেপ নেয়া জরুরি৷ যেমন বাংলাদেশে অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে৷ একইসাথে আছে জনশক্তি ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা৷ তবে সব সমস্যার বড় সমস্যা হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা না থাকা৷ কোনো ক্ষেত্রে ভিশন থাকলেও সেই ভিশন বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের খুব অভাব থাকে৷ বর্তমান সরকার 'ভিশন ২০২১' ঘোষণা করলেও তার জন্য কোনো সার্ভে করা হয়েছে বলে আমার জানা নেই৷ আমাদের দেশের একটি সমস্যা হলো স্বপ্ন বা প্রত্যাশা মুখে মুখে থাকে, কথায় থাকে৷ যদি ভিশন বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে সরকার ও বেসরকারি পর্যায় থেকে সমান পদক্ষেপ নিতে হবে৷ আইসিটি ক্ষেত্রে ভিশন ২০২০'র জন্য একই বিষয় প্রযোজ্য৷ 



ই-বিজ

No comments:

Post a Comment