Monday, March 22, 2010

হার্ড ডিস্ক মেইনটেনেন্স - পর্ব ১

 কম্পিউটারের যে সমস্যা গুলো সব চাইতে বেশী আসে তা হলো -

১) কম্পিউটার হঠাৎ করে খুব স্লো হয়ে গেছে
২) কম্পিউটার একটু আগেও বা গতকাল কাজ করছিল ভালই, আজকে চালুই হচ্ছেনা
৩) হার্ড ডিস্ক শব্দ করছে খুব
৪) ডিস্ক ইরর দিচ্ছে বার বার
৫) সি ড্রাইভে জায়গা কম বলছে
৬) কোন কোন প্রোগ্রাম লোড হতে অতিরিক্ত সময় নিচ্ছে বা লোডই হচ্ছেনা
৭) কম্পিউটার চলতে চলতে একটা নীল স্ক্রিন আসছে (ব্লু স্ক্রিন অফ ডেথ
৮) বিনা কারনে রিষ্টার্ট হচ্ছে কম্পিউটার
৯) কম্পিউটার শাট ডাউন হচ্ছেনা
১০) ডেস্কটপ আসার পর বা কোন প্রোগ্রাম ওপেন করার পর হ্যাং করছে
কম্পিউটারের বেসিক মেইনটেনেন্স এর ধারনা গুলো দেই।

১) আপনার পিসি একটি যন্ত্র, সে আপনার জন্য কাজ করে। আপনার কি বোর্ডের প্রতিটি কি প্রেস বা মাউসের প্রতিটি নড়াচড়ায় সে রেসপন্ড করে। তাই, খাওয়া দাওয়ার প্রয়োজন না থাকলেও মনিটর, কি বোর্ড আর কেসিং নরম কাপড় দিয়ে নিয়মিত মুছে দেয়া ছাড়াও এর আরও কিছু যত্নের দরকার আছে।

২) পিসির মেইনটেনেন্সের বেসিক আর কমন টুল গুলো আপনার উইন্ডোজেই (মুলত সব অপারেটিং সেষ্টেমেই) দেয়া আছে, এর জন্য বাড়তি সফটয়ার ইনস্টল করার তেমন কোন দরকার নেই।

৩) বেসিক মেইনটেনেন্স করতে আপনাকে কম্পিউটার বিদ্যায় পারদর্শি হতে হবেনা। কম্পিউটার চালাতে জানলেই হবে।

৪) মেইনটেনেন্স চালু হলে আপনাকে পিসির সামনে রাত জেগে মাছি তাড়াতে হবেনা, ঘুমোবার আগে চালু করে দিয়ে ঘুমিয়ে যাবেন, মেইনটেনেন্স শেষে পিসি চালু হয়ে গেলেও যদি তা সারা রাত চালু থাকে, তাহলে পিসির কোন ক্ষতি হবেনা।

৫) মেইনটেনেন্স করার সময় বড় ধরনের কোন সমস্যা হবার সম্ভাবনা খুব কম। আপনার পিসির হার্ড ডিস্ক খুব বেশী পুরানো, মানে ৩/৪ বছরের পুরানো না হলে চিন্তার তেমন কিছুই নেই।

৬) যতক্ষন পিসি চালু থাকে, হার্ড ডিস্কের ভেতর ডিস্কটা খুব জোরে ঘুরতে থাকে, ফলে এর ভেতরের যন্ত্রপাতি ক্ষয় হতে থাকে। তাই ৩ বছরের পুরানো হার্ড ডিস্ক বদলে ফেলা, অন্তত ব্যাক আপ হার্ড ডিস্ক কিনে ফেলাও পিসি মেইনটেনেন্সের একটা অংশ।

৭) হার্ড ডিস্ক নষ্ট হওয়ার বড় একটা কারন পাওয়ার সার্জ। বিদ্যুতের ওঠানামা, পিসি চালু অবস্থায় কারেন্ট চলে যাওয়া, পিসির কুলিং ফ্যান ঠিক ভাবে কাজ করা (হার্ড ডিস্ক বেশী গরম হয়ে গেলে), প্রয়োজনের তুলনায় কম র‌্যাম ব্যাবহার হার্ড ডিস্কের ওপর যথেষ্ট চাপ ফেলে।

৮) প্রতিবার কম্পিউটার চালু করার পর হার্ড ডিস্কে অনেক অপ্রয়োজনীয় ফাইল তৈরী হয়, যা কম্পিউটার নিজে থেকে মুছতে পারেনা। সে জন্য হার্ড ডিস্কে কোন কিছু সেইভ না করলেও ডিস্ক ভরে যেতে থাকে, ফলে জায়গার অভাব দেখা দেয়। মেইনটেনেন্স করে খুব সহজেই এই অদরকারী ফাইল গুলো মুছে ফেলা যায়, ফলে পিসির সি ড্রাইভে জায়গা অনেক বেড়ে যায়।

৯) কম্পিউটারের সব প্রোগ্রাম সঠিক ভাবে চলার জন্য নির্দিষ্ট পরিমান হার্ড ডিস্ক স্পেস বা জায়গার দরকার হয়, সেই পরিমান জায়গা না পেলে প্রোগ্রাম গুলো ক্রাস (হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়া) করে বা পিসি হ্যাং করে।

১০) হার্ড ডিস্ক ইরর দেয়া মানেই ডিস্কটা বদলে ফেলতে হবে, বা উইন্ডোজ রি ইন্সটল করতে হবে - এমন নয়। অনেক সময়েই শুধু মেইনটেনেন্স করেই এই সব ইরর সারিয়ে তোলা যায়।


এই সব সমস্যাই সরাসরি হার্ড ডিস্কের সাথে সম্পর্কযুক্ত। খুব সামান্য কিছু কাজ করেই এই সমস্যাগুলো সমাধান করা যায়, এগুলো মোটামুটি সবাই করতে পারবে, কোন কম্পিউটার প্রফেশনালের কাছে ধরণা দেয়া ছাড়াই। কেবলমাত্র হার্ড ডিস্ক শব্দ করা ছাড়া অন্য কারনগুলোতে পিসির কেসিং খুলতেও হয়না। সামান্য কিছু মেইনটেনেন্স যদি করেন, প্রতিদিন তো নয়ই, সপ্তাহেও নয়, মাত্র এক মাসে একবার, তাহলেও এই সমস্যা গুলোর অনেক গুলোই এড়াতে পারবেন।

বেসিক মেইনটেনেন্স খুবই সোজা, ঘাবড়ে যাবার মত, বা না পারার মত কোন কিছু নয়। বর্ননার সাথে সাথে ছবি দেয়া আছে। এই পদ্ধতিটি উইন্ডোজ পিসির জন্য করা। আশা করি সবাই কাজগুলো করতে পারবেন। আর কোন প্রকার সমস্যা হলে তো আমরা আছিই।

প্রথম কাজঃ ডিস্ক ক্লিন আপ

মেইনটেনেন্সের প্রথম ধাপেই যা করতে হবে তা হলো হার্ড ডিস্কে জমে যাওয়া জঞ্জাল অর্থাৎ অপ্রয়োজনীয় ফাইলগুলো মুছে ফেলতে হবে। এটি করার জন্য আমরা উইন্ডোজের ডিস্ক ক্লিন আপ টুলটি ব্যবহার করবো।

১) ডেস্কটপ অথবা অল প্রোগ্রামস থেকে মাই কম্পিউটারে ক্লিক করতে হবে। তখন যে উইন্ডোটি আসবে তা অনেকটা নীচের ছবিটির মত। আপনার হার্ড ডিস্কে পার্টিশন বেশি হলে C ড্রাইভের পর D,E,F ... এভাবে আরও অনেক ড্রাইভ দেখাবে। কিন্তু আমরা শুধু C ড্রাইভটি নিয়ে কাজ করবো।



২) C ড্রাইভে রাইট ক্লিক করলে যে মেনুটি আসবে তার সব চাইতে নীচে থাকবে Properties. ওখানে ক্লিক করুন, নীচের ছবির মত একটি উইন্ডো আসবে।



৩) উইন্ডোজের মাঝামাঝি থাকা ডিস্কের গোল ছবিটার পাশে Disk Cleanup লেখা বাটনটিতে ক্লিক করুন, নীচের ছবির মত উইন্ডো আসবে।



৪) Files to Delete এর নীচে যত গুলো চেক বক্স আছে সব গুলোতে টিক দিয়ে দিন। তারপর Disk Cleanup এর পাশে More Options ট্যাবে ক্লিক করুন, নীচের উইন্ডোটি আসবে।



৫) এই ট্যাবে তিনটা ভাগ, সব চাইতে নীচে আছে System Restore। এর পাশে একটা বাটন Clean up... ক্লিক করুন। একটা ছোট পপ আপ উইন্ডো আসবে, যার দুইটা বাটন Delete আর Cancel. এখান থেকে Delete এ ক্লিক করুন। খানিকটা সময় নেবে ফাইল গুলো ডিলিট করতে। হয়ে গেলে একেবারে নীচে দুটি বাটন OK আর Cancel থেকে OK বাটনে ক্লিক করুন। আরেকটা পপ আপ উইন্ডো আসবে, সেখান থেকে Delete Files বাটনে ক্লিক করুন। ফাইল ক্লিন আপ শুরু হবে। শেষ হয়ে গেলে ডিস্কের গোল ছবিটা সহ যে উইন্ডোটা প্রথমে খুলেছিলেন, সেটার নীচে OK লেখা বাটনে ক্লিক করুন।

ব্যস, আপনার বেসিক ক্লিনিং পার্ট শেষ। পিসি রিষ্টার্ট করুন ও স্পিডের পরিবর্তন লক্ষ্য করুন। অবস্যই আগের চাইতে ভাল স্পীড পাবেন।

আপনি চাইলে এর পরের পার্টটা মাসে একবার করতেও পারেন, অথবা ২/৩ মাসে একবার করলেও চলে।

পরের কাজঃ ডিস্ক ইরোর চেক

১) C ড্রাইভে রাইট ক্লিক করলে যে মেনুটি আসবে তার সব চাইতে নীচে থাকবে Properties. ওখানে ক্লিক করুন, নীচের ছবির মত একটি উইন্ডো আসবে।



২) General ট্যাবের পাশ থেকে Tools ট্যাবে ক্লিক করুন। নীচের উইন্ডোটির মত উইন্ডো দেখতে পাবেন।



৩) এই উইন্ডোর উপরে Error-checking অপশনের ভেতর থেকে Check Now বাটনটি ক্লিক করলে দুইটি অপশন সহ ছোট উইন্ডোটি খুলবে। দুটি বক্সের টিক দিয়ে দিন। তারপর Start এ ক্লিক করুন। একটা ছোট পপ আপ উইন্ডো আসবে, যেটা বলবে যে উইন্ডোজ চাল তথাকা অবস্থায় ডিস্ক চেক করা সম্ভব না, আপনি কি ডিস্ক চেক সিডিউলড করে রাখতে চান? Schedule Disk Check বাটনে নিশ্চিন্তে ক্লিক করুন।

এবার কম্পিউটার রিষ্টার্ট করুন। চালু হবার পর ডেস্কটপ আসার আগে নীচের উইন্ডোর মত ডিস্ক চেক করতে থাকবে।



মনে রাখবেনঃ

ডিস্ক চেক সিডিউল ক্যানসেল করার জন্য আপনাকে রিষ্টার্ট করার পরেই কয়েক সেকেন্ড সময় দেবে। আপনি চাইলে - মানে কম্পিউটারে কোন জরুরী কাজ থাকলে সে সময় যে কোন কি চেপে ডিস্ক চেক ক্যানসেল করতে পারেন, কিন্তু পরের বার রিষ্টার্ট করতে গেলে আবার সিডিউল দেখাবে। কাজেই সবকাজ শেষ করে ডিস্ক চেক দেয়া উচিৎ। চেক শেষ হতে কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা সময়ও লাগতে পারে। কাজেই সময় বেশী লাগলে ঘুমিয়ে যেতে পারেন। ডিস্ক চেক শেষ হবার পর পিসি রিষ্টার্ট হবে। সে সময় আপনি পিসির সামনে না থাকলেও ঘন্টা খানেক পর পিসি আপনা থেকেই স্লিপ মোডে চলে যাবে।

 SOURCE:

No comments:

Post a Comment