স্মার্ট পিসির জন্য দরকার ডুয়াল বায়োস সমৃদ্ধ একটি মাদারবোর্ড। পাশাপাশি একথাও অনস্বীকার্য, একমাত্র মানসম্মত কম্পোনেন্টই ভালো মাদারবোর্ডের নিশ্চয়তা দিতে পারে। আমরা জানি কোনো কোনো মাদারবোর্ডে ডুয়াল বায়োস থাকে। অর্থাৎ ডুয়াল বায়োস সমৃদ্ধ মাদারবোর্ডে দুটি বায়োস সিস্টেম থাকে। একটি প্রাইমারি এবং অপরটি সাপোর্টিং বায়োস। প্রথমটি অকার্যকর বা নষ্ট হলে অপর বায়োস রিকভারি করে পিসিকে সচল রাখা যায়।
এ লেখায় বায়োস কি, বায়োস কিভাবে কাজ করে, কেন বায়োস অকার্যকর হয় এবং করণীয় কাজ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
বায়োস, বায়োসের কাজ এবং কিভাবে কাজ করে?
বায়োস (BIOS)-এর পূর্ণরূপ হলো ‘বেসিক ইনপুট-আউটপুট সিস্টেম’। আর কারিগরি ভাষায় বলা যায়- বায়োস হচ্ছে একটি চিপ। এটি মাদারবোর্ডের ভেতরেই সংযোজিত থাকে, যা পিসি অন করার পর পরিপূর্ণভাবে পিসি চালু হওয়ার আগে পিসির সামগ্রিক যন্ত্রাদি (ইনপুট-আউটপুট ডিভাইস ও অ্যাপ্লিকেশনসহ সব সফটওয়্যার) ঠিক আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করে। সিপিইউর অভ্যন্তরে কাজটি এতো দ্রুত হয় যে সাধারণ কমপিউটার ব্যবহারকারী তা বুঝতেও পারেন না। অবশ্য কমপিউটার ব্যবহারকারীর তা বোঝার দরকারও পড়ে না।
বায়োসের কাজের পরিধি কিছুটা নির্ভর করে কমপিউটার ব্যবহারকারী কোন ধরনের- সাধারণ, পেশাজীবী, বিশেষজ্ঞ নাকি গবেষক তার ওপর। এই পরিধি ব্যবহারকারীর ধরন অনুযায়ী চাহিদা বিবেচনা করে ডস থেকে বায়োসের সেটিং নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। পিসি চালু হওয়ার আগে বায়োসের পোস্ট বা পাওয়ার অব সেল্ফ টেস্টের কাজের মধ্যে রয়েছে- পিসিতে ভাইরাস বা হার্ডওয়্যার যন্ত্রাদির কোনো সমস্যা আছে কিনা, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনা, ওভারক্লকিং সিস্টেম ইত্যাদি। এরপর বায়োস কমপিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের ওপর দায়দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। কিন্তু ওএস ডাটা বিনিময় সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনায় ব্যাকএন্ডে সহায়তা করে বায়োস। এজন্য হার্ডওয়্যার যন্ত্রাদির দিকেও নজর রাখতে হয় বায়োসকে। এক কথায় বলা যায়, বায়োস হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মাঝে ইন্টারপ্রেটার হিসেবে কাজ করে থাকে।
তবে কাজটি সরাসরি হয় না, যোগাযোগ রক্ষাকারী হিসেবে সার্বিক কাজটি তিনটি স্তরে হয়ে থাকে। প্রথম স্তরে পিসি ওপেন হওয়ার আগে বায়োস প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পর ওএস-এর ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। দ্বিতীয় স্তরে ওএস যেকোনো ধরনের ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য বায়োসকে সংকেত পাঠায় এবং তৃতীয় পর্যায়ে বায়োস সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়। কাজগুলো দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হয়।
এখানে বাস্তবের একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি বুঝতে কিছুটা হলেও সহজ হবে। আমাদের শরীরের কোথাও মশা বসলে মস্তিষ্কের সুনির্দিষ্ট জায়গা থেকে সংকেত আসে ‘তোমার শরীরের অমুক জায়গায় মশা বসেছে’। এরপর মস্তিষ্ক আমাদের এও সংকেত দেয়, ওই মশাকে মারতে হলে কোন হাত সুবিধাজনক। সর্বোপরি নিশ্চিত সংকেতের পর আমরা সে অনুযায়ী কাজ করি। এখানেও এ কাজগুলো এতটাই দ্রুত মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে ঘটে যে আমরা তা নিয়ে ভাবি না।
বায়োস অকার্যকর বলতে কি বোঝায়?
পিসি অন করার পর প্রথমেই কাজ শুরু করে বায়োস, পরে অপারেটিং সিস্টেম ও অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন কার্যকর হয়। কিন্তু ধরা যাক পিসি অন করার কিছুক্ষণ পর বা চালু হয়েই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কিছুতেই পরিপূর্ণভাবে চালু হচ্ছে না। এ সময় স্ক্রিন ব্ল্যাক অবস্থায় কোনো মেসেজ আসতে পারে, আবার না-ও আসতে পারে। কিন্তু এটি নিশ্চিত, বায়োস অকার্যকর বা ফেইল্যুর হয়েছে। বিভিন্ন কারণে এমনটা হতে পারে। এর অন্যতম কয়েকটি কারণ হলো-
ক) পিসিতে ভাইরাসের আক্রমণ,
খ) হার্ডওয়্যারের যেকোনো যন্ত্রাদি অকার্যকর হওয়া,
গ) বায়োস ফেইল্যুর হওয়া,
ঘ) ওভারক্লকিংয়ের সমস্যা ইত্যাদি। বায়োস কার্যকর না থাকলে মাদারবোর্ডও কোনো কাজ করতে পারে না।
বায়োসের জন্য এরকম সমস্যা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পেতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বায়োস চিপ রিপ্লেস/পরিবর্তন করতে হয়। এজন্য আপনার পিসি ভেন্ডর কর্তৃপক্ষের RMA (রিপ্লেসমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অথরিটি) বিভাগে নিয়ে যেতে হবে।
ডুয়াল বায়োস
ডুয়াল বায়োসের বৈশিষ্ট্য হলো- এতে দুটি ফিজিক্যাল বায়োস-রম মাদারবোর্ডে একত্রিতভাবে সংযুক্ত থাকে। একটি প্রধান বায়োস এবং অপরটি সাপোর্টিং বা সহায়ক বায়োস। প্রধান বায়োসে একটি চিপ সংযুক্ত থাকে, যা প্রাথমিকভাবে পিসিকে বুট করতে (পরিপূর্ণ চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত) কার্যকর ভূমিকা রাখে। দ্বিতীয় চিপটি ব্যাকআপ বায়োস হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে এবং ডিফল্ট হিসেবে পিসিকে কার্যক্ষম রাখতে সার্বিক সহায়তা দেয়। এজন্য দ্বিতীয় বায়োস রিকভার করতে হয়। পিসির মাদারবোর্ডে ডুয়াল বায়োস থাকলে এবং প্রাইমারি বায়োসকে নষ্ট হয়ে গেলে পিসি বন্ধ হয়ে যায়। তখন ব্ল্যাক স্ক্রিনে বায়োস রিকভার করবেন কিনা, এরকম অপশন আসবে। এভাবে দ্বিতীয় বায়োসকে কার্যকর করা যায়। এছাড়া অন্য কোনো কারণে পিসি বন্ধ হয়ে গেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হয়।
মূল কথাটি হলো এরকম- প্রধান বায়োস কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেললে বা নষ্ট হয়ে গেলে, ডুয়াল বায়োসের ‘বায়োস রিকভারি এজেন্ট’ তার একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে দ্বিতীয় বায়োসটি প্রধান বায়োসের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
ডুয়াল বায়োস সমৃদ্ধ মাদারবোর্ড না থাকার বিড়ম্বনা
পিসিতে যদি একটি বায়োস সংবলিত মাদারবোর্ড থাকে এবং কোনো কারণে সেটি পুরোপুরি অকার্যকর বা নষ্ট হয়, তাহলে পিসিতে কোনো কাজ করা যায় না। পিসির অ্যাপ্লিকেশন/ওএস কোনোকিছু্ই ওপেন হবে না। এরকম অবস্থায় বায়োস চিপ পরিবর্তন করতে হতে পারে। এমনকি মাদারবোর্ডও পরিবর্তন করতে হতে পারে।
আবার এমনও হতে পারে, পিসি অন করার পর বার বার আপনাআপনিই পিসি রিস্টার্ট বা শাটডাউন হয়ে যাচ্ছে। তখন পিসি ব্যবহারকারীকে ভেন্ডর কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত জায়গায় পিসিটি নিয়ে গিয়ে নতুনভাবে বায়োস চিপ লাগিয়ে নিতে হয়।
সিঙ্গেল বায়োস সংবলিত মাদারবোর্ডে এসব নানা বিড়ম্বনার চাইতে বড় কথা হলো, প্রয়োজনীয় কাজের মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। এমনটি হোক তা নিশ্চয়ই কেউ চাইবেন না।
উল্লিখিত আলোচনার পর একথা বলা যায়, একটি পিসির জন্য বায়োসের গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়া সামগ্রিক এসব বিড়ম্বনা থেকে মুক্ত থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করার জন্য ডুয়াল বায়োসসমৃদ্ধ ও আধুনিক ফিচারসহ মাদারবোর্ডই হতে পারে একমাত্র সমাধান।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment