সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য ইন্টেল সম্প্রতি বাজারে ছেড়েছে Core i5 প্রসেসর। এই প্রসেসরটি বহুল প্রতিষ্ঠিত কোর টু ডুয়োর প্রতিস্থাপন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। নতুন স্থাপত্যে গড়া এ প্রসেসরটি ইতোপূর্বে অবমুক্ত Core i7 পরিবারের সদস্য। নেহালেম নামযুক্ত এ স্থাপত্যের প্রথম প্রসেসর হচ্ছে Core i7-900 সিপিইউ। চটকদার এ প্রসেসরটি বাজারে ছেড়ে ইন্টেল সবাইকে হতবাক করে দেয়, কারণ এর গতি ছিল অবিশ্বাস্য প্রচলিত সিপিইউর তুলনায়। কিন্তু এর অসহনীয় মূল্য (১০০০ ডলার) উৎসাহী ক্রেতাদের বিমুখ করে। ফলে এটি প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। সাধারণ ক্রেতাদের জন্য সুলভ মূল্যে নতুন এ প্রজন্মের একটি প্রসেসর বের করা ইন্টেলের জন্য অপরিহার্য হয়ে যায়। এ কারণেই Core i5 জন্ম নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় Core i3ও বাজারে আসবে বলে জানা যায়। নতুন প্রজন্মের (নেহালেম স্থাপত্য) এ প্রসেসরের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে Turbo Boost ফিচার, যা বিগত দিনের প্রসেসরে দেখা যায়নি। লোড অনুযায়ী প্রসেসরের (বিভিন্ন কোরের) গতি আপ বা ডাউন হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। যার ফলে পারফরমেন্স বেড়ে যাবে। শুধু তাই নয় ৪ কোরবিশিষ্ট এ প্রসেসর কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে প্রচলিত সিপিইউর তুলনায়। অর্থাৎ প্রশংসা পাবার মতো একটি ব্যাপার বটে।
প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী উচ্চগতির চিপ এসে নিম্নগতির চিপকে হটিয়ে দেয় এবং ক্রমাগত জায়গা করে নিতে থাকে। কিন্তু এবার ব্যাপারটি হয়েছে উল্টো। ইন্টেল Core i7-900-এর চেয়ে নিম্নগতির তিনটি চিপ (প্রসেসর) বাজারে ছেড়েছে। এগুলো হলো-
Core i5-750
Core i7-860 Core i7 পরিবারের সদস্য
Core i7-870
ইন্টেলের নামকরণ পদ্ধতি নিয়ে বেশ ধাঁধার সৃষ্টি হয়েছে, যেমন- Core 2 Duo, Core 2 Quad, হালে Core i7, Core i5 বা Core i3 ইত্যাদি নামগুলো নিয়ে মানুষ বেশ হিমশিম খাচ্ছে। মনে হচ্ছে, নাম নিয়ে ইন্টেল যেন বেশ দ্বিধান্বিত রয়েছে বা অস্থিরতায় ভুগছে। যদিও আশা করা যায়, সময়ের সাথে এ ব্যাপারটি স্থিতি লাভ করবে এবং পরিপক্বতা অর্জন করবে।
আরেকটি ব্যাপার রয়েছে চিপসেটের সঙ্গে সাযুজ্যতা। Core i7-900 সিরিজের প্রসেসরের জন্য ┤58 মাদারবোর্ড উপযোগী। অন্যদিকে Core i7-800 সিরিজের প্রসেসর এবং Core i5-700 সিরিজের প্রসেসরগুলো P55 মাদারবোর্ডে চলার জন্য উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। সুতরাং ব্যাপারটি একটি বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, কারণ Core i7-900 এবং Core i7-800 ভিন্ন ভিন্ন সকেট এবং চিপসেট ব্যবহার করার ফলে পারস্পরিকভাবে বিনিময়যোগ্য নয়।
Core i7-900 বনাম হালের তিনটি প্রসেসর
সদ্য অবমুক্ত তিনটি প্রসেসর Core i5-750, Core i7-860 এবং Core i7-870-এর সাথে নেহালেম পরিবারের প্রথম সদস্য Core i7-900-এর যেন কোনো মিলই নেই, যোজন-যোজন দূরত্ব। Core i7-900 যেখানে ┤58 চিপসেটের সংযুক্তির জন্য নব-উদ্ভাবিত Intel QuickPath ব্যবহার করেছে, সেখানে উল্লিখিত তিনটি প্রসেসর অনেকটা প্রচলিত পদ্ধতি তথা নর্থব্রিজ-সাউথব্রিজ ধরনের সিস্টেম ধারণ করেছে, যা ডাইরেক্ট মিডিয়া ইন্টারফেস (DMI) হিসেবে খ্যাত। তবে এখানে সামান্য পার্থক্য আছে, Core i5 এবং নতুন Core i7 নিজেরাই নর্থব্রিজের কাজ সমাধা করে অর্থাৎ মেমরি কন্ট্রোলার এবং PCI এক্সপ্রেস কানেকশনের জন্য আলাদা নর্থব্রিজ চিপসেটের প্রয়োজন নেই। P55 চিপসেট অন্যান্য কাজ যেমন স্টোরেজ সাব সিস্টেম (সাটা), লো-স্পিড কানেকশন ইত্যাদি কাজ সম্পাদন করে থাকে। ইন্টেলের সিস্টেম ডিজাইনে এটি একটি বিরাট পরিবর্তন সন্দেহ নেই। তিন চিপ তথা প্রসেসর, নর্থব্রিজ, সাউথব্রিজের পরিবর্তে দুই চিপ তথা প্রসেসর, সাউথব্রিজের সমাধান পেশ করেছে ইন্টেল।
মাদারবোর্ড চিপসেট
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, নতুন তিনটি প্রসেসর P55 চিপসেট ব্যবহার করবে [কোড নাম-Ibex Reak], যদিও এ চিপসেট দিয়ে শুরু হয়েছে, তবে ধারণা করা হচ্ছে ইন্টেল ক্রমান্বয়ে চিপসেটের আপগ্রেড করবে। লক্ষণীয়, ইন্টেল চিপসেটের নামকরণও পরিবর্তন করেছে, যেমন পূর্বের ICH7, ICH9, ICH10 (X58) পরিবর্তে এর নাম দেয়া হয়েছে PCH (Platform Controller Hub)। হাইস্পিড গ্রাফিক্স এবং মেমরি কন্ট্রোলারের দায়িত্ব নিয়ে নেবার পর PCH অন্যান্য যে কাজ করছে তাহলো ছয়টি SATA2 পোর্ট (মেট্রিক্স স্টোরেজ RAID 0/1/5/10), ইন্টেল HD অডিও এবং একটি PCI এক্সপ্রেস-X1 কানেকশন প্রদান ইত্যাদি।
কি ধরনের র্যাকম
Core i7-900 ত্রি-চ্যানেল ডিডিআরথ্রি র্যা ম ব্যবহার করেছিল। অন্যদিকে নতুন এ তিনটি প্রসেসর দ্বি-চ্যানেল ডিডিআরথ্রি র্যাgম ব্যবহার করবে যা ১.৩৩৩ মেগাহার্টজ পর্যন্ত সাপোর্ট করে। অন্যদিকে Core i7-900 ত্রি-চ্যানেল ডিডিআরথ্রি র্যাgম (ওভার ব্লক ছাড়া) শুধু ১.০৬৬ মেগাহার্টজ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারে। দ্বি-চ্যানেল র্যা মকে ডিডিআরটু র্যা মের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে ভুল হবে। নতুন তিনটি প্রসেসর ডিডিআরটু র্যামম ব্যবহার করতে অক্ষম। দ্বি-চ্যানেল মেমরির জন্য জোড়া হিসেবে মেমরি মড্যুল লাগাতে হবে, অন্যদিকে Core i7-900-এর জন্য তিনটি করে মড্যুল লাগাতে হবে। এ তিনটি প্রসেসরকে ধারণের জন্য গিগাবাইট, এমএসআই এবং আসুস P55 চিপসেটসম্বলিত মাদারবোর্ড বাজারে ছেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ GA-P55-UD6, ASUS P>P55D Delux, MSI P55-GD8O, GA P55-UD3 এবং MSI P55-GD65 ইত্যাদি। এ মাদারবোর্ডগুলো CGA-1156 সকেটসমৃদ্ধ।
গতির পরিমাপ এবং টার্বো বুস্ট
সিপিইউর গতি দিয়ে এর পারফরমেন্স বুঝা এখন আর সম্ভব নয়। কারণ, নতুন প্রজন্মের Core i7, Core i5 প্রসেসরে ইন্টেল নতুন একটি ফিচার বা বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে, এর নাম Turbo-Boost, যা আগের সিপিইউগুলোতে বিদ্যমান ছিল না। তবে এ ফিচারটি মাল্টিকোর সিপিইউর জন্য খুবই উপযোগী। আগের প্রসেসরগুলো শুধু একটি নির্দিষ্ট গতিতে চলে এবং কার্যনির্বাহ করে থাকে; ফলে প্রসেসরের গতি দিয়ে এর পারফরমেন্সের পার্থক্য নির্ণয় করা সম্ভব হতো। বর্তমানে তা সম্ভব নয়। কারণ গিগাহার্টজ এখন পুরোপুরি সূচক নয়। নেহালেম স্থাপত্যের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এটি কোরগুলোর মধ্যে লোড ব্যালান্স করে থাকে।
অর্থাৎ লোড অনুযায়ী বিভিন্ন কোর বিভিন্ন গতিতে রান করবে। শুধু তাই নয়, তাপমাত্রা অনুযায়ী বিভিন্ন কোরের গতি কমাবে-বাড়াবে এ টার্বো-বুস্ট ফিচার। ধরা যাক, একটি একক থ্রেডেড সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনের কথা যেটি Core i5-750তে চলছে। Core i5-750 স্বাভাবিকভাবে ২.৬৬ গিগাহার্টজ গতিতে চলার উপযোগী করে ছাড়া হয়েছে। এখন যদি এ প্রসেসরে উল্লিখিত অ্যাপ্লিকেশনটি চালানো হয়, তাহলে দেখা যাবে, চারটি কোরের মধ্যে তিনটি কোর অলসভাবে ২.৬৬ গিগাহার্টজে চলছে এবং বাকি একটি স্পিড বুস্ট করে ৩.২ গিগাহার্টজে চলছে অর্থাৎ এটি অ্যাপ্লিকেশনকে নির্বাহ করছে। যদি ডুয়াল থ্রেডেড অ্যাপ্লিকেশন হয়, তাহলে দুটো কোর খুব বেশি গতিতে চলবে। মাল্টিথ্রেডেড অ্যাপ্লিকেশন হলে কোরগুলো ভাগ করে নেবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কোনো কোরের স্পিড বুস্ট করবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন কোর বিভিন্ন স্পিডে চলা কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার হবে না।
টার্বো বুস্ট হচ্ছে একটি স্বাধীন প্রক্রিয়া। বিভিন্ন কোরের গতির ওঠা-নামা হয় লোডের কমা-বাড়ার ফলে। মূলধারার প্রসেসর Core i5-750তে চারটি কোর রয়েছে এবং কোনো হাইপার থ্রেডিং নেই। অর্থাৎ ৪ কোর/থ্রেড। Core i5-860 এবং Core i7-870তে চারটি কোর ছাড়াও হাইপার থ্রেডিং রয়েছে। ফলে এটি ৮ কোর/থ্রেড হিসেবে অপারেটিং সিস্টেমের কাছে নিজেকে পেশ করবে। এখানে স্মরণযোগ্য, তিনটি প্রসেসরেই ৮ মে.বা. L3 ক্যাশ মেমরি রয়েছে।
ছকে বিভিন্ন প্রসেসরের বিভিন্ন কোরের বহুমাত্রিক স্পিড দেখা যাচ্ছে
প্রসেসর Core i5-750 Core i7-860 Core i7-870
স্টক স্পিড ২.৬৬ গি.হা. ২.৮ গি.হা. ২.৯৩ গি.হা.
কোর ৪টি ৪টি ৪টি
ব্যস্ত কোর ৪ ৩ ২ ১ ৪ ৩ ২ ১ ৪ ৩ ২ ১
স্পিড ইনক্রিমেন্ট
১ ১ ৪ ৪ ১ ১ ৪ ৫ ২ ২ ৪ ৫
strong>বিন-জাম্প
আসল স্পিড
২.৮ ২.৮ ৩.২ ৩.২ ২.৯৩ ২.৯৩ ৩.৩৩ ৩.৪৬ ৩.২ ৩.২ ৩.৪৬ ৩.৬
গি.হা.
পরিসংহার
ইন্টেলের আই-সিরিজের (i-Series) প্রসেসর নতুনত্ব ও বিশেষত্বের দিক দিয়ে বেশ চমকপ্রদ সন্দেহ নেই। তবে Core 2 Duo যেভাবে অবিস্মরণীয় বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছে তাতে হুট করে তাকে হটিয়ে এটি অবস্থান করে নেবে এ আশা করা সমীচীন হবে না। যদিও Core i5-এর মূল্য যথেষ্ট কম রাখা হয়েছে। তথাপি সাধারণ ক্রেতাদের এটি আকর্ষণ করতে আরো অপেক্ষা করতে হতে পারে। অন্যদিকে ডেস্কটপের বাজার যেভাবে দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে, তাতে মনে হয় এর ল্যাপটপ ভার্সন কার্যকর হতে পারে। সম্প্রতি অবমুক্ত মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ৭.০ হার্ডওয়্যারের জন্য যথেষ্ট পরিশীলিত বিধায় সিপিইউর পারফরমেন্স বর্তমান প্রেক্ষাপটে তেমন আকর্ষণীয় নয় বিধায় এ প্রসেসরগুলো মূল ধারায় আসতে সময় নেবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তবে এ প্রসেসরের সার্ভার ভার্সন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে হচ্ছে; যদিও ইন্টেল কখন তাতে হাত দেবে তা এখনও বলেনি।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment