কমপিউটার শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে যে গণনা করে বা গণনাযন্ত্র। গ্রিক Compute শব্দ থেকে এর উৎপত্তি, যার অর্থ গণনা করা। প্রাথমিকভাবে কমপিউটার বানানোর মূল উদ্দেশ্যই ছিলো হিসেব নিকেশ করার কাজ করা। কিন্তু এখনকার যুগে কমপিউটার শব্দটি তার আভিধানিক অর্থের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। কমপিউটার শব্দটি এখন অনেক কিছুর সাথে জড়িত। কমপিউটার নামের যন্ত্রটি এখন নানারকম জটিল হিসেব নিকেশ করা, তথ্য সংরক্ষণ করা, গ্রাফিক্স ডিজাইন করা, প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহার করা এবং বিনোদন ছাড়াও আরো নানারকম কাজের সাথে সম্পৃক্ত। আগের দিনে কমপিউটার ব্যবহারকারীকে কমপিউটিংয়ে অত্যন্ত দক্ষ হতে হতো। কারণ কমপিউটারকে নির্দেশ দেয়ার জন্য তারা ব্যবহার করতেন কঠিন সব কমপিউটার ল্যাঙ্গুয়েজ, যা সাধারণ মানুষের আয়ত্তের বাইরে ছিলো। তখনকার অপারেটিং সিস্টেমগুলো ব্যবহার করা ছিলো বেশ কঠিন। কমপিউটার অপারেট সহজ করার লক্ষ্যে মাইক্রোসফট গ্রাফিক্যাল ইউজার ইটারফেস সহযোগে বাজারে প্রথম আবির্ভাব ঘটায় MS-DOS (MicroSoft-Disk Operating System) নামের অপারেটিং সিস্টেমের। ১৯৮৫ সালের নভেম্বরে বের হওয়া এই সিস্টেমটির জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে তা তখনকার বাজারে চলমান অপারেটিং সিস্টেম ম্যাক ওএস-এর একক আধিপত্যের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়েছিল। মাইক্রোসফটের এই অপারেটিং সিস্টেম সবার সামনে নতুন এক জানালা খুলে কমপিউটিংয়ের জগতের দৃশ্য অবলোকনে সহায়তা করায় মাইক্রোসফটের কর্ণধার বিল গেটস তাদের বানানো অপারেটিং সিস্টেমের নাম রাখলেন উইন্ডোজ। ধীরে ধীরে মাইক্রোসফটের এই সফল অগ্রযাত্রায় মাইলফলক হিসেবে আমরা উপহার পেলাম অনেকগুলো অপারেটিং সিস্টেমের। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- উইন্ডোজ ৯৫, উইন্ডোজ ৯৮, উইন্ডোজ ২০০০, উইন্ডোজ মিলেনিয়াম (এমই), উইন্ডোজ নিউ টেকনোলজি (এনটি), উইন্ডোজ এক্সপি (এক্সপেরিয়েন্স) ও উইন্ডোজ ভিসতা।
বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ কমপিউটার ব্যবহারকারীর পিসিতে যে অপারেটিং সিস্টেমটি পাওয়া যাবে তা হচ্ছে উইন্ডোজ। তাই বলে লিনআক্স নামের মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম ও ম্যাক ওএস-এর চাহিদাও যে বাজারে কম তা বলা যাবে না। সাধারণ কমপিউটার ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগেরই পছন্দের তালিকায় রয়েছে উইন্ডোজের নাম। উইন্ডোজ ৯৮ ও উইন্ডোজ এক্সপি হচ্ছে দুই সময়ের দুই সফল অপারেটিং সিস্টেম। উইন্ডোজ ৯৮-এর ব্যবহার এখন কিছুটা কমই বলা চলে কিন্তু উইন্ডোজ এক্সপির চল এখনো বেশ চাঙ্গা। এক্সপির পর বাজারে এসেছে ভিসতা। কিন্তু তা তেমন একটা সাফল্য লাভ করতে পারেনি। ভিসতা চালানোর জন্য হাই রিকোয়ারমেন্টের পিসির প্রয়োজনীয়তা এবং সফটওয়্যার সাপোর্টের দুর্বলতা ছাড়াও আরো অনেক কারণ ছিলো যা ভিসতার সাফল্যের পথে বাধা ছিলো। ভিসতার সব দুর্বলতা কাটিয়ে একে আরো হাল্কা, সুন্দর ও সাবলীল করে কমপিউটার ব্যবহারকারীদের হাতে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে মাইক্রোসফট একটি উদ্যোগ নেয় এবং তা হচ্ছে তাদের নতুন উইন্ডোজ, যার নাম উইন্ডোজ সেভেন। নতুন এই উইন্ডোজটিকে তারা ভিসতার সফল রূপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং চিন্তা করছেন এই উইন্ডোজের ফলে তারা আবার তাদের আগের সুনাম ধরে রাখতে সফলকাম হবেন। ভিসতার কারণে উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের মাঝে যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল, উইন্ডোজ সেভেন সেই অসন্তোষ সন্তোষে পরিবর্তন করে দেবে বলে মাইক্রোসফটের কর্মকর্তাদের বিশ্বাস। এখন দেখা যাক কিসের ভিত্তিতে তারা এই কথা ভাবছেন অর্থাৎ তারা এমন কি নতুন সুবিধা যোগ করেছেন উইন্ডোজ সেভেনে, যা ব্যবহারকারীদের মনকে আকৃষ্ট করবে। উইন্ডোজ সেভেনে নতুন কি কি যোগ করা হয়েছে আর কি কি ফিচার বাদ দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে আমাদের আজকের আলোচনার মূল বিষয়।
নামকরণ
‘উইন্ডোজ সেভেন নামটা কেমন যেনো, তাই না? কেনো এরকম একটা নাম বেছে নিলো মাইক্রোসফট? এই প্রশ্নটা সবার মনে জাগাটাই স্বাভাবিক। অনেকেই হয়তো ভাবছেন এটি মাইক্রোসফটের রিলিজ দেয়া ৭ম উইন্ডোজ, তাই তার নাম রাখা হয়েছে উইন্ডোজ সেভেন। তাই কি? আসুন দেখা যাক, আসলে কিসের ভিত্তিতে উইন্ডোজটির এই নাম রাখা হয়েছে। যদি উইন্ডোজের সিরিজের কথা চিন্তা করে সাজানো হয় তবে তালিকাটি হবে- ১. উইন্ডোজ, ২. উইন্ডোজ ২, ৩. উইন্ডোজ ৩, ৪. উইন্ডোজ ৯৫, ৫. উইন্ডোজ ৯৮, ৬. উইন্ডোজ এমই, ৭. উইন্ডোজ এক্সপি, ৮. উইন্ডোজ ভিসতা ও ৯. উইন্ডোজ সেভেন। নাহ! তাহলে তো এই আদলে নামকরণটা ঠিক হচ্ছে না। কারণ এই তালিকা অনুযায়ী উইন্ডোজ সেভেনের নাম উইন্ডোজ নাইন হবার কথা, তাই নয় কি? আসলে উইন্ডোজের ভার্সনের তালিকা করা হয়েছে তাদের NT Kernel-এর ভার্সনের ওপরে ভিত্তি করে। এই তালিকা অনুযায়ী সাজালে- ১. NT ৩.৫১, ২. NT ৪.০, ৩. ২০০০ = NT ৫.০, ৪. XP = NT ৫.১, ৫. Vista = NT ৬.০ এবং ৬. ৭ = NT ৭.০। নিউ টেকনোলজি কারনেল ভার্সন ৭-এর কারণে এর নাম দেয়া হয়েছে উইন্ডোজ সেভেন।
উইন্ডোজ সেভেনের আগমন
মাইক্রোসফটের একটি অপারেটিং সিস্টেমভিত্তিক প্রজেক্ট যার নাম ব্ল্যাককম্ব। এই উইন্ডোজটির উন্নতি করা হচ্ছিল তৎকালীন বাজারে বিদ্যমান উইন্ডোজ এক্সপি ও উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৩ কে আরো ভালো রূপ দিতে। ব্ল্যাককম্বের কাজ বেশ ভালোই এগিয়ে ছিলো কিন্তু তার মাঝে রিলিজ করা হয় নতুন আরেকটি উইন্ডোজ, যার নাম ছিলো লংহর্ন। লংহর্নকে বলা হয় ভিসতার প্রি-রিলিজ ভার্সন। এতে ব্ল্যাককম্বের বেশ কিছু ফিচার ছিলো। কিন্তু এই প্রজেক্ট পুরোপুরি বাস্তবে পরিণত হবার আগেই উইন্ডোজ কিছু ভাইরাস আক্রমণের শিকার হয়, ফলে ভিসতার রিলিজের সময়কাল পিছিয়ে যায়। ২০০৬ সালে ব্ল্যাককম্ব প্রজেক্টটির কোডনেম বদলে রাখা হয় ভিয়েন্না এবং ২০০৭ সালে ভিয়েন্নার নাম রাখা হয় উইন্ডোজ সেভেন। উইন্ডোজ সেভেনের প্রথম রিলিজ হয় ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে যার বিল্ড (Build) নম্বর ছিলো ৬৫১৯। এখন বাজারে উইন্ডোজ সেভেনের বিল্ড ৭০২২ ভার্সনটি পাওয়া যাচ্ছে। মূল উইন্ডোজ সেভেন ২০০৯ সালের মাঝামাঝি বা ২০১০ সালের প্রথম দিকে বাজারে আসতে পারে বলে এর নির্মাতারা ঘোষণা দিয়েছেন।
উইন্ডোজ সেভেনে বাদ দেয়া ফিচারসমূহ
নববর্ষের প্রথম দিনে দোকানিরা চালু করে হালখাতা। তাতে পুরনো সব হিসেব নিকেশ চুকিয়ে নেয় বা বাকির তালিকায় থাকা ছোটখাটো হিসেব বাদ দিয়ে আবার নতুন করে খাতা লেখা হয়। তাই বলে ভারি রকমের বাকির বোঝা কিন্তু বাদ দেয়া হয় না। ঠিক সেরকমভাবেই উইন্ডোজ সেভেনে পুরনো কিছু ছোটখাটো অপশন বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তার স্থানে নতুন কিছু অপশন যোগ করা হয়েছে। এখানে কিছু প্রোগ্রামের তালিকা দেয়া হলো যেগুলো উইন্ডোজ ভিসতায় ছিল কিন্তু উইন্ডোজ সেভেনে তা বাদ দেয়া হয়েছে। বাদ দেয়া শেল (Shell) ফিচারগুলোর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে- ক্ল্যাসিক স্টার্ট মেনু ইউজার ইন্টারফেস, মিডিয়া প্লেয়ারের মিনি প্লেয়ার অপশন, স্টার্ট মেনুতে ডিফল্ট হিসেবে থাকা ইন্টারনেট ব্রাউজার ও ই-মেইল ক্লায়েন্ট পিনআপ আইকন, টাস্কবারে প্রোগ্রামগুলো একের পর এক সাজিয়ে গ্রুপিং করা, আগে টাস্কবার বাটনে গ্রুপিংয়ের ক্ষেত্রে কয়টি উইন্ডো খোলা আছে তার সংখ্যা দেখাতো, এখন তা দেখাবে না, টাস্কবারের নেটওয়ার্ক অ্যাক্টিভেশন অ্যানিমেশন আইকন, অ্যাডভান্সড সার্চ বিল্ডার ইউজার ইন্টারফেস ইত্যাদি। মিডিয়া প্লেয়ারে বাদ দেয়া কিছু অপশনের তালিকায় রয়েছে- অ্যাডভান্সড ট্যাগ এডিটর, অ্যালবাম আর্ট পেস্টিং, সদ্য যোগ করা অটো প্লেলিস্ট। চোখে পড়ার মতো বাদ দেয়া প্রোগ্রামের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- উইন্ডোজ ফটো গ্যালারি, উইন্ডোজ মুভি মেকার, উইন্ডোজ মেইল, উইন্ডোজ ক্যালেন্ডার, উইন্ডোজ সাইডবার ইত্যাদি। এগুলো মাইক্রোসফটের ওয়েবসাইট থেকে উইন্ডোজ এডিশনাল প্রোগ্রাম হিসেবে ডাউনলোড করা যাবে। এছাড়াও আরো কিছু বাতিলের তালিকায় থাকা প্রোগ্রামের মধ্যে রয়েছে- অরোরা, উইন্ডোজ এনার্জি ও উইন্ডোজ লোগো নামের স্ক্রিনসেভার, উইন্ডোজ ডিফেন্ডারের সফটওয়্যার এক্সপ্লোরার, উইন্ডোজ মিটিং স্পেস, রিমুভেবল স্টোরেজ মিডিয়া, ইঙ্কবল নামের গেমস, অনস্ক্রিন কীবোর্ডের নিউমেরিক কীপ্যাড, মাইক্রোসফট এজেন্ট ২.০ টেকনোলজি, উইন্ডোজ আল্টিমেট এক্সট্রাসসহ আরো অনেক কিছু।
নতুন যোগ করা অপশনসমূহ : উইন্ডোজ সেভেনে সংযোজিত উল্লেখযোগ্য নতুন কিছু প্রোগ্রামের মাঝে রয়েছে- টাচ, স্পিচ ও হ্যান্ড রাইটিং রিকগনিশন বা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা, ভার্চুয়াল হার্ডড্রাইভ সমর্থন, নতুন কিছু ফাইল ফরম্যাট সাপোর্ট, মাল্টি কোরের প্রসেসরের পারফরমেন্স বৃদ্ধির জন্য উন্নত ব্যবস্থা, দ্রুত বুট করা, কারনেলের উন্নতিকরণ ইত্যাদি সুবিধা।
বাকি নতুন অপশনগুলো আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলো-
ইউজার ইন্টারফেস :
উইন্ডোজ সেভেনে রাখা হয়েছে ভিসতার উইন্ডোজ অ্যারো নামের ইউজার ইন্টারফেস ও ভিজ্যুয়াল স্টাইল। কিন্তু উইন্ডোজ অ্যারোর বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে যা আরো বেশি ইউজার ফ্রেন্ডলি। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে সুবিধাটি দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে নিম্নমানের হার্ডওয়্যার কনফিগারেশনেও এই ইউজার ইন্টারফেসটি চলবে, যা কিনা ভিসতার ক্ষেত্রে হতো না। এমনকি পুরনো ইন্টেল জিএমএ (Intel GMA) চিপেও অ্যারোর থ্রিডি ডেস্কটপের ডিসপ্লে হবে কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই।
উইন্ডোজ এক্সপ্লোরার :
উইন্ডোজ সেভেনে উইন্ডোজ এক্সপ্লোরারে যুক্ত করা হয়েছে কিছু নতুন ফিচার। তার মধ্যে লাইব্রেরি নামের ফিচারটি অন্যতম। লাইব্রেরি নামের ফিচারটি হচ্ছে একপ্রকার ভার্চুয়াল ফোল্ডার, যাতে নানা জায়গা থেকে আলাদা আলাদা ফাইল, যেমন- ডকুমেন্ট, মিউজিক, পিকচারস, ভিডিও ইত্যাদি এনে তা তালিকা করে রাখা যায়। এই লাইব্রেরি স্টার্ট মেনুতে রাখা যাবে। এই লাইব্রেরির জন্য রয়েছে আলাদা সার্চ করার ব্যবস্থা। এছাড়া উইন্ডোজ সেভেনের উইন্ডোজ এক্সপ্লোরার উইন্ডোজ ভিসতার চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন।
টাস্কবার :
উইন্ডোজে টাস্কবারের প্রথম আবির্ভাব ঘটে উইন্ডোজ ৯৫-এর মধ্য দিয়ে। উইন্ডোজে টাস্কবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উইন্ডোজ সেভেনের টাস্কবারে তাই আনা হয়েছে নতুন বৈচিত্র্য। ভিসতার টাস্কবারের চেয়ে এটি দেখতে অনেক সুন্দর ও ভিসতার টাস্কবারের চেয়ে সেভেনের টাস্কবার ১০ পিক্সেল লম্বা। টাস্কবার একটু লম্বা রাখার কারণ হচ্ছে যাতে টাচ স্ক্রিন কমান্ড দিতে কোনো সমস্যা না হয়। টাস্কবারের একেবারে বামে রয়েছে গোলাকার স্টার্ট বাটন, তার পাশে পর্যায়ক্রমে রয়েছে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, উইন্ডোজ এক্সপ্লোরার ও মিডিয়া প্লেয়ারের আইকন। এতে সিঙ্গেল কলামের ক্ল্যাসিক স্টার্ট মেনু আনার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। নতুন এই টাস্কবারে ক্যুইক লঞ্চ অপশনটি ও মিডিয়া প্লেয়ারকে স্টার্টবারের সাথে সংযুক্ত করার ব্যবস্থাটি বাদ দেয়া হয়েছে। তার বদলে টাস্কবারে নিজের ইচ্ছেমতো প্রোগ্রাম পিন করে রাখা যাবে। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার দিয়ে কোনো কিছু ডাউনলোড করলে বা কোনো কিছু কপি করতে কি হারে ডাটা ট্রান্সফার হচ্ছে তা টাস্কবারের ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার বা উইন্ডোজ এক্সপ্লোরার আইকনে দেখা যাবে।
কোনো প্রোগ্রাম চালালে যেমন কোনো ওয়ার্ড ফাইলে কাজ করার সময় তা টাস্কবারে লম্বা আকারে ফাইলটির নামসহ দেখাতো কিন্তু উইন্ডোজ সেভেনে তা স্কয়ার বক্সে ওয়ার্ড ফাইলের আইকন হিসেবে দেখাবে। টাস্কবারে রাখা আইকনগুলোতে মাউসে কার্সর নিলে থাম্বনেইলস ভিউতে একটি বক্সে দেখাবে। একইরকমের অর্থাৎ যদি ৩টি ওয়ার্ড ডকুমেন্ট একসাথে খুলে রাখেন তবে থাম্বনেইলস ভিউতে ৩টি ফাইল আলাদাভাবে দেখাবে এবং যার ওপরে ক্লিক করা হবে সেই ডকুমেন্টটি খুলবে। এমনকি মিডিয়া প্লেয়ারে চলমান কোনো গানকে থাম্বনেইলস ভিউ থেকে কন্ট্রোল করা যাবে।
টাস্কবারে থাকা কোনো আইকনের ওপরে রাইট ক্লিক করলে জাম্প লিস্ট পাওয়া যাবে। ওয়ার্ড ডকুমেন্টের জাম্প লিস্টের ক্ষেত্রে পুরনো আর কোন কোন ডকুমেন্ট নিয়ে কাজ করা হয়েছে তা দেখাবে। উইন্ডোজ এক্সপ্লোরারের ক্ষেত্রে যেসব ফোল্ডার আপনি বেশি ব্যবহার করে থাকেন তার একটি তালিকা দেখাবে। মিডিয়া প্লেয়ারের ক্ষেত্রে পছন্দের গানগুলোর তালিকা এবং প্লেলিস্ট দেখাবে, এতে করে খুব দ্রুততার সাথে আপনি আপনার কাজগুলো সম্পাদন করতে পারবেন। ইন্টারনেট এক্সপ্লোয়ারে রাইট ক্লিক করে আপনি সম্প্রতি ভিজিট করা ওয়েবসাইটগুলোর হিস্টরি দেখতে পারবেন। উইন্ডোজ লাইভ মেসেঞ্জারের জাম্প লিস্টে আপনি পাবেন ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং, সাইনিং অফ ও চেঞ্জিং অনলাইন স্ট্যাটাস অপশনগুলো।
উইন্ডোজের আগের ভার্সনগুলোতে টাস্কবারে শো ডেস্কটপ নামের আইকনটি থাকতো ক্যুইক লঞ্চে। কিন্তু উইন্ডোজ সেভেনে তা রাখা হয়েছে একেবারে ডানপাশে, যা হঠাৎ করে দেখে বোঝার উপায় নেই যে তা একটি আইকন। টাস্কবারের একেবারে ডানে শো ডেস্কটপে মাউস কার্সর নিলে ডিসপ্লেতে যত প্রোগ্রাম রয়েছে তার সব ট্রান্সপারেন্ট হয়ে ডেস্কটপটি দেখাবে এবং ক্লিক করলে ডেস্কটপে চলে যাবে। টাস্কবারের ডান পাশে রয়েছে নোটিফিকেশন এরিয়া যাতে উইন্ডোজের নানারকম সমস্যা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ মেসেজগুলো দেখাবে।
উইন্ডো ম্যানেজমেন্ট :
উইন্ডোর টাইটেলবারে মাউস ক্লিক করে তা কাঁপিয়ে বড়-ছোট করা যাবে অথবা আগের মতো ডবল ক্লিক করেও ছোট-বড় করা যাবে। টাইটেল বার বানানো হয়েছে খুবই স্বচ্ছ করে তাই পেছনের ব্যাকগ্রাউড স্পষ্ট দেখা যাবে। বেটা ভার্সনে প্রতিটি উইন্ডোর টাইটেল বারে ডান কোনায় মিনিমাইজ, ম্যাক্সিমাইজ ও ক্লোজ বাটনের পাশে ফিডব্যাক লিঙ্ক রয়েছে। এতে ক্লিক করে উইন্ডোজের নতুন প্রোগ্রাম, ভিজ্যুয়াল স্টাইল, গেমস ইত্যাদির ব্যাপারে আপনার মতামত লিখে বা তারকা চিহ্ন দিয়ে রেটিং করে তা মাইক্রোসফটের কাছে পাঠাতে পারবেন।
অন্যান্য সুবিধা :
ডেস্কটপে ওয়ালপেপার স্লাইড শো করার ব্যবস্থা রয়েছে, এতে নির্দিষ্ট সময় পর পর ওয়ালপেপার বদলে যাবে। উইন্ডোজ মিডিয়া সেন্টারে যোগ করা হয়েছে আরো নতুন কিছু অপশন যা আগে ছিল না। উইন্ডোজ সেভেন আরো অনেক রকমের ফাইল ফরম্যাট সাপোর্ট করবে তার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হচ্ছে- MP4, MOV, 3GP, AVCHD, ADTS, M4A ও WTV মাল্টিমিডিয়া কন্টেনার ইত্যাদি। এতে আলাদা করে কোনো কোডেক ইনস্টল করা প্রয়োজন পড়বে না, কারণ এতে H.264, MPEG4-SP, ASP, DivX, Xvid, MJPEG, DV, AAC-LC, LPCM, AAC-HE ইত্যাদি কোডেক দেয়া আছে। এতে দেয়া হয়েছে নতুন ফন্ট গ্র্যাব্রিওলা। ওয়ার্ডপ্যাডে অফিস ওপেন এক্সএমএল (XML) ও ওডিএফ (ODF) ফরম্যাটেও ফাইল সেভ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
উইন্ডোজ সেভেনকে মূলত বানানো হয়েছে পারসোনাল কমপিউটারে ব্যবহার করার জন্য অর্থাৎ ঘরের বা অফিসের ডেস্কটপে, ল্যাপটপে, ট্যাবলেট পিসিতে, নেটবুকে বা মিডিয়া সেন্টার পিসিতে ব্যবহার করার জন্য। মজার ব্যাপার হচ্ছে উইন্ডোজ সেভেন চালাতে ভিসতা চালানোর মতো হাই কনফিগারেশনের পিসির দরকার নেই। ১ গিগাহার্টজের প্রসেসর ও ৫১২ মেগাবাইট র্যানম হলেই চালানো যাবে উইন্ডোজ সেভেন। বেটা ভার্সনটি ব্যবহার করে যাচাই করে দেখতে পারেন নতুন এই উইন্ডোজটি।
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
No comments:
Post a Comment