Sunday, April 4, 2010

পিসি মাদারবোর্ডের আদ্যোপান্ত

 http://www.diycustomcomputers.com/images/MotherboardB.jpg

মায়ের কোলে যেমন করে আদর যত্নে বেড়ে ওঠে সন্তান, শেখে জীবনযাপনের সহজ পাঠ, অনেকটা একই উপায়ে কম্পিউটারের নানা প্রয়োজনীয় অংশকে নিজের মধ্যে ধারণ করে মাদারবোর্ড৷ অবশ্য নামেই প্রকাশিত হয় কম্পিউটারের এই অন্যতম প্রধান অংশের পরিচয় অর্থাত্‍ কর্মব্যাপ্তি৷ মাদারবোর্ডের মাধ্যমেই অন্যান্য যন্ত্রাংশগুলো একে অপরের সাথে যুক্ত হয় এবং তথ্য আদান প্রদান করে৷ এরপরেই যে অংশটির নাম আসে তা হলো প্রসেসর৷ এক কম্পিউটারের মস্তিষ্ক বলা চলে, যা সকল কার্যসম্পাদন করে৷ সাথে সহযোগী হিসেবে প্রাথমিক তথ্য ধারণ করে র‌্যানডম অ্যাকসেস মেমোরি বা র‌্যাম৷ কম্পিউটারের জটিল কার্যপ্রক্রিয়ার কিছুটা সহজ বিবরণ দিতে মূলত মাদারবোর্ড, প্রসেসসর ও র‌্যামের কার্যপ্রণালীর আদ্যোপান্ত নিয়েই এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন৷

যেভাবে কাজ করে মাদারবোর্ড
আপনি যদি কম্পিউটারের কেসিং খুলে ফেলেন, তাহলে দেখতে পাবেন সার্কিটবোর্ডের ন্যায় একটি অংশ যাতে সিপিইউ'র অন্যান্য উপাদান সংযুক্ত আছে এটিই মাদারবোর্ড নামে পরিচিত৷ একটি মাদারবোর্ড আপনার কম্পিউটারের সকল পার্টস-এর পাওয়ার গ্রহণ এবং একটি সাথে আরেকটির যোগাযোগ স্থাপন করে৷ গত ২০ বছর যাবত মাদারবোর্ড আবিষ্কারের পর পিসি'র মূল অংশ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে৷ প্রথম তৈরিকৃত মাদারবোর্ডে কিছু সংখ্যক পার্টস ছিল৷ প্রসেসর এবং কার্ড টের সমন্বয়ে প্রথম আইবিএম পিসি'র মাদারবোর্ড তৈরি করা হয়৷ ব্যবহারকারীরা তাদের ইচ্ছেমতো ফ্লপি ড্রাইভ কন্ট্রোলার এবং টে মেমোরি লাগিয়ে ব্যবহার করতে পারতেন৷ বর্তমানে মাদারবোর্ডের অবস্থান এমন এক জায়গায় পৌঁছে গেছে যে মাদারবোর্ডের সাথে নানারকম বিল্ট ইন ফিচার সংযুক্ত থাকছে৷

কম্পিউটারের নানামুখী ব্যবহারে মাদারবোর্ড কিভাবে কাজ করে৷ চলুন তা জেনে নেয়া যাক-

ফর্ম ফ্যাক্টর
একটি মাদারবোর্ড কার্যতই অচল যদি না এটিকে কম্পিউটারের সাহায্যে অপারেট করা হয়৷ মাদারবোর্ডের প্রধান কাজ হলো কম্পিউটারের মাইক্রোপ্রসেসর চিপকে ধরণ করা এবং অন্যান্য অংশের সাথে সংযোগ ঘটানো৷ কম্পিউটারের যাবতীয় প্রোগ্রাম রান অথবা এর পারফরম্যান্স বৃদ্ধি পাওয়া মাদারবোর্ডের একটি অংশ, যা প্লাগের মাধ্যমে এর ভায়া হিসেবে স্লট অথবা পোর্টের সাহায্যে করে থাকে৷
একটি মাদারবোর্ডের আকার আকৃতি এবং লেআউটকেই বলা হয় ফর্ম ফ্যাক্টর৷ ফর্ম ফ্যাক্টর কম্পিউটার কেসের আকার আকৃতি এবং নিজস্ব উপাদানকেও প্রভাবিত করে৷ কিছু নির্দিষ্ট ফর্ম ফ্যাক্টর আছে যার সবকিছুই স্ট্যান্ডার্ড কেসে ফিট করতে পারে৷ ফর্ম ফ্যাক্টরের মধ্যে অনেক স্ট্যান্ডার্ড জিনিস আছে যা মাদারবোর্ডে অ্যাপ্লাই করা হয়৷ কিছু স্ট্যান্ডার্ড অন্য মাদারবোর্ডেও পাওয়া যায় যেমন-
* কী ধরনের প্রসেসর মাদারবোর্ডে ব্যবহার করতে হবে তা প্রসেসরের জন্য তৈরিকৃত সকেট দেখেই বোঝা যাবে৷
* নর্থ ব্রিজ ও সাউথ ব্রিজ নামে দুটি পার্ট তৈরি করা হয় যা মাদারবোর্ডের চিপসেট লজিক সিস্টেমের একটি অংশ হিসেবে কাজ করে৷
* বায়োস কম্পিউটারের বেশিরভাগ বেসিক ফাংশনকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রত্যেকবার কম্পিউটার স্টার্ট নেওয়ার সময় এটি সেলফ টেস্ট করে৷ কিছু সিস্টেমের ডুয়াল বায়োস থাকে যা ব্যাকআপ ধরে রাখে যদি এর সিস্টেম ফেল অথবা আপডেটিং-এর সময় এরর দেখায়৷
* রিয়েল টাইম ক্লক চিপ ব্যাটারী দ্বারা পরিচালিত বলে বেসিক সেটিংস এবং সিস্টেম টাইম রক্ষণাক্ষেণ করে৷

স্লট এবং পোর্ট দ্বারা তৈরিকৃত মাদারবোর্ডে থাকে:
* পেরিফেরাল কম্পোনেন্ট ইন্টারকানেক্ট (পিসিআই)- ভিডিও, সাউন্ড এবং ভিডিও ক্যাপচার কার্ড এমনকি নেটওয়ার্ক কার্ডের জন্যও সংযোগ দেখা থাকে৷
* এক্সেলেরেটেড গ্রাফিক্স পোর্ট (এজিপি)- শুধুমাত্র ভিডিও কার্ডের জন্য এই পোর্টটি ব্যবহার করা হয়৷
* ইন্টিগ্রেটেড ড্রাইভ ইলেক্ট্রনিক্স (আইডিই)- শুধুমাত্র হার্ডড্রাইভ ও সিডি/ডিভিডি রমের জন্য এই ইন্টারফেসটি ব্যবহার করা হয়৷
* ইউনিভার্সেল সিরিয়াল বাস (ইউএসবি) অথবা ফায়ার ওয়্যার- অতিরিক্ত মেমোরি যা বহনযোগ্য একরম অনেক ধরনের পেরিফেরাল এর জন্য এই ইন্টারফেসটি ব্যবহার করা হয়৷ বর্তমানে কম্পিউটারের অনেক যন্ত্রাংশ-অনুষঙ্গই ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়৷
* মেমোরি স্লট- এই স্লটে মেমোরি লাগানো হয়৷

মাদারবোর্ডে নতুন প্রযুক্তি :

* রিডান্ড্যান্ট অ্যারে অব ইনডিপেনডেন্ট ডিস্কস (আরএআইডি) অনেকগুলো কন্ট্রোলার ড্রাইভকে একটি ড্রাইভ হিসেবে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে৷
* পিসিআই এক্সপ্রেস একটি নতুন প্রোটোকল যা বাসের চাইতে নেটওয়ার্ক হিসেভে বাল কাজ করে৷ এটি অন্যান্য প্রয়োজনীয় পোর্টকে বাতিল করতে পারে এমনকি এজিপি পোর্টকেও৷
* মাদারবোর্ডে অন-বোর্ড সাউন্ড, নেটওয়ার্কিং, ভিডিও এবং অন্যান্য পেরিফেরাল সাপোর্ট থাকে৷

সকেট এবং প্রসেসর
অনেকেই মনে করেন কম্পিউটারের স্পিড এবং পারফরম্যান্স প্রসেসরের উপর নির্ভর করে৷ কেবল দ্রুত গতিসম্পন্ন প্রসেসরই দ্রুতগতির কম্পিউটার হতে পারে৷ প্রথম এরকম সিস্টেমকে পিন গার্ড অ্যারে (পিজিএ) বলা হতো৷ এ ধরনের পিনগুলো একটি সকেট লে আউটের সঙ্গে ফিট করা হতো যা সকেট-৭ নামে পরিচিত৷ এর অর্থ হলো যেকোনো প্রসেসর যেকোনো মাদারবোর্ডে ফিট হয়ে যেত৷ তবে বর্তমানে প্রসেসর প্রস্তুতকারীরা যেমন- ইন্টেল ও এএমডি বিভিন্ন ধরনের পিজিএ ব্যবহার করে থাকে যা সকেট-৭ এ ফিট করে না৷ এখন মাইক্রো প্রসেসরের অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে যার দরুণ অনেকগুলো পিনের প্রয়োজন হয়ে পড়ছে৷ একারণে চিপের পাওয়ার বেড়ে গেছে৷ বর্তমানে পিজিএ-এর পিনের নামের সাহায্যে সিপিইউ অ্যারেঞ্জ করা হয়৷ সাধারণত ব্যবহৃত সকেটের নামগুলো হলো-
* সকেট ৪৭৮ - যা পুরনো পেন্টিয়াম ও সেলেরন প্রসেসরের জন্য ব্যবহৃত হতো৷
* সকেট ৭৫৪-এএমডি সেলেরন এবং কিছু এএমডি এ্যাথলন প্রসেসরের জন্য৷
* সকেট ৯৩৯-নতুন এবং দ্রুতগতিসম্পন্ন এএমডি এ্যাথলন প্রসেসরের জন্য৷
* সকেট এএম২-সর্বশেষ নতুন এএমডি এ্যাথলন প্রসেসরের জন্য৷

সর্বশেষ নতুন ইন্টেল প্রসেসরে কোন পিজিএ নেই৷ এখানে এলজিএ আছে এবং এটি সকেট 'টি'-এ ব্যবহার করা হয়৷ এলজিএ হলো ল্যান্ড গ্রিড অ্যারে৷ একটি এলজিএ পিজিএ থেকে আলাদা শুধুমাত্র সকেটের পিনের কারণে প্রসেসরের এর জন্য নয়৷
যদি কেউ নির্দিষ্ট কোন প্রসেসর-এর জন্য মাদারবোর্ড সিলেক্ট করেন তাহলে প্রসেসর বেসড মাদারবোর্ড নেয়ার চেষ্টা করবেন৷ উদাহরণস্বরূপ যদি আপনি ইন্টেল অথবা এএমডি'র তৈরিকৃত নতুন কোন মাল্টি কোর চিপস ব্যবহার করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই ঐ চিপের জন্য নির্দিষ্ট এবং সঠিক সকেটের মাদারবোর্ড নির্বাচন করতে হবে৷ সাধারণত প্রসেসর সকেটে ফিট হবে না যদি না তাদের পিজিএ ম্যাচ করে৷

চিপসেট
চিপসেটের মাধ্যমে সিপিইউ এবং মাদারবোর্ড অন্যান্য অংশের সাথে যোগাযোগ স্থাপন রাখে৷ চিপসেট এক ধরনের 'গ্লু' যা মাইক্রোপ্রসেসরে যুক্ত থাকে৷ মাদারবোর্ড-এর দুটি অংশ আছে যার একটির নাম নর্থ ব্রিজ এবং অপরটির নাম সাউথ ব্রিজ৷ নর্থ ব্রিজটি ফ্রন্ট সাইড বাস (এফএসবি)'কে ভায়া হিসেবে ধরে প্রসেসরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত৷ নর্থব্রিজের সাহায্যে মেমোরি কন্ট্রোলারকে লোকেটেড করা হয় যা প্রসেসর'কে মেমোরিতে যাওয়ার জন্য দ্রুত অ্যাকসেস দেয়৷ এটি আরো যুক্ত থাকে এজিপি বা পিসিআই এক্সপ্রেসের সাথে৷

সাউথব্রিজটি নর্থব্রিজের তুলনায় একটু ধীরগতি সম্পন্ন৷ প্রসেসর থেকে সমস্ত ইনফরমেশন প্রথমে সাউথব্রিজে পৌঁছে তারপর নর্থব্রিজের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়৷ অন্যান্য বাসগুলো সাউথ ব্রিজে যুক্ত থাকে যেমন পিসিআই বাস, ইউএসবি পোর্ট এবং আইডিই বা সাটা হার্ডডিস্ক৷
চিপসেট মাদারবোর্ডের একটি ইন্টিগ্রেটেড অংশ আর এ কারণেই এটিকে রিমুভ বা আপগ্রেড করা যায় না৷ এর অর্থ শুধুমাত্র প্রসেসর-এর জন্য মাদারবোর্ডের সকেট ফিট থাকলেই চলবে না একইসাথে মাদারবোর্ডের চিপসেট প্রসেসরের সাথে সমানভাবে কাজ করতে হবে৷

বাস স্পিড
বাস হলো সাধারণ একটি সার্কিট যা মাদারবোর্ডের মধ্যে একটি অংশের সাথে অন্যটির সংযোগ ঘটায়৷ বাস একই সাথে অনেক ডাটা হ্যান্ডল করতে পারে৷ বাসের স্পিড মেগাহার্জের সাহায্যে পরিমাপ করা হয়৷ এর অর্থ কতগুলো ডাটা একই সাথে বাসের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করতে পারে৷
স্বাভাবিকভাবে বাস স্পিড বলতে ফ্রন্ট সাইড বাস (এফএসবি)'র স্পিডকেই বোঝায় যা নর্থব্রিজের সাথে সিপিইউ সংযুক্ত৷ এফএসবি-এর স্পিড রেঞ্জ ৬৬ মেগাহার্জ থেকে ৮০০ মেগাহার্জ পর্যন্ত হতে পারে৷ এফএসবি'র স্পিড কম্পিউটারের পারফরম্যান্সকেও প্রভাবিত করতে পারে৷
এখানে মাদারবোর্ডের আরো কিছু বাস'এর ধারণা দেওয়া হলো-
* ব্যাক সাইড বাস (বিএসবি) : লেভেল-২ কেস এর সাথে সিপিইউ-এর সহিত যুক্ত থাকে যা সেকেন্ডারি বা এক্সটার্নাল কেস নামে পরিচিত৷ প্রসেসর ব্যাক সাইড বাসের স্পিডের সাহায্যে স্পিড নির্ধারণ করে৷
* মেমোরি বাস : মেমোরির সাথে নর্থব্রিজের সংযোগ থাকে৷
* আইডিই বা এটিএ বাস ডিস্ক ড্রাইভের সাথে সাউথ ব্রিজের সংযোগ ঘটায়৷
* এজিপি বাস সিপিইউ এবং মেমোরির সাথে ভিডিও কার্ড সংযুক্ত করে৷ এজিপি বাসের স্পিড ৬৬ মেগাহার্জ৷
* পিসিআই বাস সাউথ ব্রিজের সাথে পিসিআই টের সঙ্গে যুক্ত থাকে৷ সিস্টেমে পিসিআই বাসের স্পিড সর্বোচ্চ ৩৩ মেগাহার্জ৷
দ্রুতগতির কম্পিউটারের বাস স্পিড দ্রততার সাথেই কোন তথ্যকে অপারেট করবে৷ কিন্তু একটি দ্রুত বাস স্পিড কাজ করতে পারে না একটি ধীরগতির প্রসেসর অথবা চিপসেটের কারণে৷

র‌্যাম

আমরা প্রসেসরের স্পিড বলতে বুঝি কম্পিউটার কত তাড়াতাড়ি কাজ সমাধান করতে পারে৷ চিপসেট এবং বাসের স্পিড কন্ট্রোল কম্পিউটারের বিভিন্ন পার্টসের সাথে যোগাযোগ রাখে৷ র‌্যামের স্পিড সরাসরি কন্ট্রোল করা হয় কারণ এটি সব ধরনের তথ্য ও ইন্সট্রাকশন কম্পিউটারকে অ্যাকসেস প্রদান করে এবং এর প্রভাব সিস্টেমের পারফরম্যাসেন্সর উপরও প্রভাব ফেলে৷
এখন সর্বত্র ডুয়াল ডাটা রেট (ডিডিআর) মেমোরি ব্যবহার হচ্ছে৷ এর অর্থ হলো মেমোরি একসাথে দ্বিগুণ আকারে প্রতি সাইকেলে ট্রান্সমিট করতে পারে যা মেমোরিকে দ্রুত হতে সাহায্য করে৷ অনেক মাদারবোর্ডেই মেমোরি রাখার স্থান রাখা হয় পর্যাপ্ত পরিমাণে এবং এগুলো নর্থব্রিজের সাথে সংযুক্ত থাকে যা ডুয়াল বাসের পরিবর্তে সিঙ্গেল বাসের সাথে ভায়া হিসেবে কাজ করে৷
একটি মাদারবোর্ডের মেমোরি ট দেখলেই বোঝা যায় এখানে কেমন এবং কি ধরনের মেমোরি সাপোর্ট করবে৷ যেমন কম্পিউটারের অন্যান্য উপাদান অথবা ট বা প্লাগ-এর মেমোরি পিনের ভায়া হিসেবে কাজ করে৷ মেমোরি মডিউল মাদারবোর্ডে রক্ষিত টের পিনের সঠিক নাম্বারে ফিট করতে হবে তা না হলে মেমোরি ফিট হবে না৷ প্রথমে শুধুমাত্র মাদারবোর্ডে প্রসেসর রাখা হতো এবং অন্যান্য কার্ডগুলো প্লাগ আকারে লাগাতে হতো মাদারবোর্ডে৷ এখন মাদারবোর্ডে অনেক ধরনের অনবোর্ড এক্সসেরিজ রাখা হয়েছে যেমন- ল্যান সাপোর্ট, ভিডিও, সাউন্ড সাপোর্ট এবং আরএআইডি কন্ট্রোলার সুবিধা৷
অনেক ব্যবহারকারী ভিডিও এবং সাউন্ড সাপোর্ট হিসেবে বিল্টইন ফিচার চায় যা তাদেরকে আকর্ষণ করে৷ অনেক গেমারের জন্য অনেক হাই-ইনটেনসিটি গ্রাফিক্স অথবা কম্পিউটার অ্যাইডেড ডিজাইন (কাড) প্রয়োজন৷ কিন্তু আলাদা ভিডিও কার্ড তাদের জন্য অনেক ভাল পারফরম্যান্স দিতে পারে৷

মাইক্রোপ্রসেসর
মাইক্রোপ্রসেসরকে কম্পিউটারের মস্তিষ্ক বলা যেতে পারে অনায়াসেই৷ একজন মানুষের চিন্তা-ভাবনা থেকে শুরু করে অন্যান্য সব কর্মকান্ডই নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্কের মাধ্যমে৷ ঠিক একইভাবে কম্পিউটার নামক বস্তুটির সব কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে প্রসেসর৷ একটা সময় প্রসেসর আকার-আকৃতি ছিলো অনেক বড়৷ ক্রমেই তা ছোট হয়ে আজ তা দাঁড়িয়েছে মাইক্রোপ্রসেসরের স্থানে৷
মাইক্রোপ্রসেসরকে কম্পিউটারের সিপিউ-ও বলা হয়ে থাকে৷ একটি মাইক্রোচিপের মাধ্যমেই মূলত প্রসেসর গঠিত হয়৷ প্রথমবারের মতো মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করা হয় ১৯৭১ সালে, যা হার্ডওয়্যার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ইন্টেল তৈরি করেছিলো৷ এর নাম ছিলো ইন্টেল ৪০০৪৷ ৪বিটের এই মাইক্রোপ্রসেসরটি যোগ এবং গুন করতে পারতো৷ এই প্রসেসরটির আগে কম্পিউটার তৈরি করা হতো আলাদা ট্রানসিস্টরের মাধ্যমে৷ ইন্টেল ৪০০৪ প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হয় প্রথম পোর্টেবল ইলেকট্রনিক ক্যালকুলেটরে৷ কালের বিবর্তনে তা রূপ নেয় কম্পিউটারে৷ ইন্টেলের মাইক্রোপ্রসেসর প্রথমবারের মতো একটি হোম কম্পিউটার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ১৯৭৪ সালে৷ ৮বিটের এই প্রসেসরের নাম ছিলো ইন্টেল ৮০৮০৷ তবে আইটি দুনিয়ায় ইন্টেল ৮০৮৮ প্রসেসরটি ব্যপক সাড়া ফেলে৷ এরপর থেকেই মূলত প্রসেসরের বিবর্তন শুরু হয়৷ ইন্টেল ৮০৮৮ থেকে শুরু করে ৮০২৮৬, ৮০৩৮৬, ৮০৪৮৬, পেন্টিয়াম, পেন্টিয়াম ২, পেন্টিয়াম ৩, পেন্টিয়াম ৪, ডুয়াল কোর, কোর টু ডুয়ো, কোয়াড কোর, কোর আই থ্রি, কোর আই ফাইভ এবং বর্তমানে সর্বশেষ সংযোজন কোর আই সেভেন, এই হলো ইন্টেল প্রসেসরের বিবর্তনধারা৷ এর প্রায় সবগুলোই ইন্টেল ৮০৮৮ এর উপর ভিত্তি করে তৈরি৷ তবে পরবর্তী সংস্করণগুলো একই কোড কয়েক হাজার গুণ দ্রুত এক্সিকিউট করতে পারে৷

চিপ
মাইক্রোপ্রসেসরের মূল হলো চিপ৷ এক ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটও বলা হয়ে থাকে৷ ছোট, পাতলা, সূ সিলিকন পাতের ওপর অসংখ্য ট্রানসিস্টরের সমন্বয়ে চিপ তৈরি হয়৷ এক ইঞ্চি বাই এক ইঞ্চি বর্গ েত্রের একটি চিপে এক কোটিরও বেশি ট্রাইসস্টর ব্যবহৃত হয়৷ একটি প্রসেসর কত দ্রুত কাজ করবে তা এই ট্রানসিস্টরের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে৷

যুক্তি ও কর্ম

মাইক্রোপ্রসেসর মূলত লজিক বা যুক্তি বা নিরেট গাণিতিক উপায়ে কাজ করে৷ এক অ্যাসেম্বলি ল্যাংগুয়েজ বলা হয়ে থাকে৷ প্রসেসরকে কোনো কমান্ড দিলে তা মূলত তিনটি কাজ করে৷
* অ্যারিথমেটিক লজিক ইউনিট বা এএলইউ ব্যবহারের মাধ্যমে মাইক্রোপ্রসেসর যোগ, গুন, বিয়োগ, ভাগ ইত্যাদি গাণিতিক হিসাব সম্পাদন করে৷ আধুনিক প্রসেসরগুলো আরো অনেক বড় বড় গাণিতিক সমস্যান সমাধান করতে পারে৷
* মাইক্রোপ্রসেসর কম্পিউটারের কোনো মেমোরি থেকে অন্য মেমোরিতে তথ্য আদান-প্রদান করে৷
* কোনো একটি কমান্ড পূর্ন সমাধানের পর নতুন কমান্ড সমাধান করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এবং সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করে৷
মাইক্রোপ্রসেসরের যাবতীয় জটিল কাজ মূলত এই তিনটি কাজেরই কোনো না কোনো অংশে পড়ে৷ একটি সাধারণ মাইক্রোপ্রসেসরের কর্মপদ্ধতি অনেকটা এইরকম-
* অ্যাড্রেস বাস (৮, ১৬, ৩২ অথবা ৬৪বিট) মেমোরিতে তথ্য প্রেরণ করে৷
* ডাটা বাস মেমোরিতে তথ্য প্রেরণ করে এবং মেমোরি থেকে গ্রহণ করে৷
* রিড এবং রাইট লাইন যথাক্রমে তথ্য ধারণ এবং প্রেরণস্থান নির্দেশ করে৷
* ক্লক লাইন এর গতি পর্যবে ণ করে৷
* রিসেট লাইন একটি টাস্ক শেষ করে নতুন টাস্ক শুরু করে৷

একটি ৮ বিটের অ্যাড্রেস ও ডাটা বাসের কাযপ্রণালী নিম্নরূপ-
* রেজিস্টার এ, বি এবং সি তথ্যের গতিপথ নির্ধারণ করে৷
* অ্যড্রেস ল্যাচ রেজিস্টার এ, বি ও সি-এর মতোই কাজ করে৷
* প্রোগ্রাম কাউন্টার কোনো টাস্ক শুরু শেষ নির্ধারণ করে৷
* অ্যারিথমেটিক লজিক ইউনিট গাণিতিক হিসাব সম্পাদন করে৷
* এএলইউ একসাথে মাত্র দুটি সংখ্যা তুলনা করতে পারে যে দুটি সমান অথবা আলাদা৷ কিন্তু এএলইউ-এর তুলনাগুলোকে সংরক্ষণ করে টেস্ট রেজিস্টার৷ এর ধারণকৃত তথ্যের মাধ্যমেই চূড়ান্ত সমাধান প্রদান করা হয়৷
* থ্রি স্টেটগুলো মূলত পুরো হিসাবকে বাইনারি রূপে ডেকোড-এনকোড করে৷ এই অংশটিই ইনপুট নেয় বাইনারি সংখ্যার মাধ্যমে এবং হিসাবের পর তা আউটপুটও দেয় বাইনারি সংখ্যার মাধ্যমে৷ বাইনারি সংখ্যায় কেবল দুটি অংক থাকে, ১ এবং ০৷ কম্পিউটারের অন্যান্য অংশ বাইনারি সংখ্যাতেই তথ্য আদ্ন প্রদান করে৷ আর এই যোগাযোগ করে 'থ্রি স্টেট'৷ ইন্সট্রাকশন রেজিস্টার ও ইন্সট্রাকশন ডেকোডার অন্যান্য অংশেন নিয়ন্ত্রণ রাখে৷

ইন্সট্রাক ডেকোডার যেভাবে কন্ট্রোল লাইন হিসেবে কাজ করে-
* ডাটা বাস থেকে ভ্যালু গ্রহণ করতে রেজিস্টার এ এবং বি'কে নির্দেশ দেয়৷
* এএলইউ থেকে টাস্ক সম্পাদন শেষে আউটপুট নিতে রেজিস্টার সি কে নির্দেশ দেয়৷
* ডাটা বাস থেকে ভ্যালু নিতে অ্যাড্রেস রেজিস্টার ও ইন্সট্রাকশন রেজিস্টারকে নির্দেশ দেয়৷
* ইনক্রিমেন্টের জন্য প্রোগ্রাম কাউন্টারকে নির্দেশ দেয়৷
* রিসেটের জন্য প্রোগ্রাম কাউন্টারকে নির্দেশ দেয়৷
* ছয়টি 'থ্রি স্টেট' এর যেকোনো একটিকে সক্রিয় করে৷
* এএলইউ'কে কি টাস্ক করতে হবে তা জানায়৷
* রিড ও রাইট লাইনকে সক্রিয় করে৷

মাইক্রোপ্রসেসরের মেমোরি
মাইক্রোপ্রসেসরের অ্যড্রেস বাস, ডাটা বাস, রিড লাইন ও রাইট লাইন সাধারণত র‌্যাম ও রম এর সাথে যুক্ত হয়৷ ৮বিট অ্যাড্রেস বাস ও ৮বিট ডাটা বাস এর একটি প্রসেসর একক সময়ে ৬৪ বাইট মেমোরি অ্যাড্রেস ও ৮ বিট মেমোরি লিখতে পারে৷ রাম হলো রিড অনলি মেমোরি৷ এটি নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রিসেট মেমোরি৷ অ্যড্রেস বাস রমকে নির্দেশ দেয় কোন কোন বিটগুলো ডাটা বাস এ স্থানান্তর করতে হবে৷ রিড লাইন যখন স্টেট পরিবর্তন করে তখন রম চিপ সেই বিটগুলোকে ডাটা বাস এ প্রেরণ করে৷ অন্যদিকে র‌্যাম হলো র‌্যানডম অ্যাকসেস মেমোরি৷ এটা বাইটের মাধ্যমে তথ্য ধারণ করে৷ রিড লাইন ও রাইট লাইনের সংকেতে ওপর প্রসেসর এখান থেকে ডাটা আদান ও প্রদান করে৷ র‌্যাম ছাড়া একটি সিম্পল কম্পিউটার তৈরি করা সম্ভব৷ কিন্তু রম ছাড়া কোনো ধরণের কম্পিউটারই তৈরি সম্ভব নয়৷ এটি মেশিন বন্ধ থাকা অবস্থাতেও তথ্য ধারণ করে নিজস্ব পাওয়ার অর্থাত্‍ ব্যাটারির মাধ্যমে৷ পিসিতে রমকে বলা হয় বায়োস বা বেসিক ইনপুট আউটপুট সিস্টেম৷ মাইক্রোপ্রসেসর পাওয়ার পাওয়া মাত্রই বায়োস রম এর তথ্যসমূহ নিয়ে কাজ করতে থাকে৷ যেমন মেশিনটিতে কী ধরণের হার্ডওয়্যার ইনস্টল করা আছে ইত্যাদি৷ বায়োসই হার্ড ডিস্কের বুট সেক্টরে প্রবেশ করে, সেখান থেকে তথ্য নিয়ে র‌্যামে স্থানান্তর করে৷ র‌্যাম থেকে তথ্য নিয়ে মাইক্রোপ্রসেসর সিস্টেম বুট করে৷ এরপর র‌্যাম থেকেই তথ্য নিয়ে নিয়ে প্রসেসর কাজ করে৷

মাইক্রোপ্রসেসরের গতি ও ধারা

একটি মাইক্রোপ্রসেসরের গতি ও পারফর্মেন্স নির্ভর করে এতে অবস্থিত ট্রানসিস্টারের ওপর৷ ৮০৮৮ প্রসেসরটি একটি ইনস্ট্রকশন এক্সিকিউট করতে ১৫ ক্লক সাইকেল সময় নিতো৷ আবার এই প্রসেসরটি একটি ১৬বিট গুন করতে ৮০ক্লক সাইকেল সময় নিতো৷ পরবর্তীতে মাল্টিপ্লাইয়ার ডিজাইনের মাধ্যমে অধিক ট্রানসিস্টর ব্যবহার করে এর গতি বৃদ্ধি করা হয়৷ পাইপলাইনিং এর ফলে ইন্সট্রাকশন ওভারল্যাপ করা সম্ভব হয়৷ এতে পাঁচটি ইন্সট্রাকশন একইসাথে করা সম্ভব হয়, যখন প্রতিটি ইন্সট্রাকশনে লাগতো ৫ ক্লক সাইকেল৷ আরো পরে মল্টিপল ইন্সট্রাকশন ডেকোডারের প্রবর্তন ঘটে, যার মাধ্যমে প্রতি ক্লক সাইকেলে একের অধিক ইন্সট্রাকশন এক্সিকিউট কর সম্ভব হয়৷
সূত্র: ই-বিজ

No comments:

Post a Comment