Sunday, April 4, 2010

বাংলাদেশে হার্ডওয়্যার ভিত্তিক শিল্প বিকাশের সম্ভাবনা ও করণীয়

প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশে কম্পিউটার সায়েন্স নির্ভর শিল্পঅবকাঠামো কিংবা দক্ষ পেশাজীবী তৈরীর কথা ভাবলে শুরুতেই মাথায় আসে সফটওয়্যার শিল্পের কথা, এই ধরনের ভাবনার পিছনে সম্ভবত যে কারণটা কাজ করে তা হল, সফটওয়্যার শিল্প নিয়ে আমাদের রয়েছে অনেক আশাবাদ ও তার সাথে সাথে রয়েছে অর্জিত সাফল্যের অনেক দৃষ্টান্ত৷ আজ বাংলাদেশের ছেলেরা কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এ নিজেদের মেধার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে, দেশেও সফটওয়্যার শিল্পের অনেক অগ্রগতি হয়েছে, আজ দেশে সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও প্রোগ্রামার তৈরীর চেষ্টা করছে, সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ খানিকটা আশাব্যঞ্জক৷

তবে সফটওয়্যারের দেশীয় বাজার, সেটা সরকারী বা বেসরকারী, যে পর্যায়েই হোক না কেন, আরও বিকশিত হলে ভাল হত বা হওয়া উচিত্‍ ছিল৷ মনে রাখা প্রয়োজন, এই শিল্পের দেশীয় বাজারের বিকাশ ও এই শিল্পে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি-এই দুইটি ধারণা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত, দেশীয় বাজার বিকশিত হলে যেমন স্থানীয় দক্ষ পেশাজীবীদের অনেক চাহিদা তৈরী হয় ও পেশাজীবীদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, ঠিক তেমনি আবার আন্তর্জাতিক ক্রেতাদেরও আস্থা অর্জন করাটা সহজ হয়৷ ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের অনুপ্রবেশের হার বৃদ্ধি পায়৷ সাবমেরিন ক্যাবল সংক্রান্ত নব্বই দশকের নীতিনিধর্ারকদের অদূরদর্শিতা বা অদক্ষতা, সফটওয়্যার শিল্পের বাজার বিকাশে কার্যকরী সরকারী উদ্যোগের অভাব ইত্যাদি কারণে আমরা যেমন মেধা থাকা সত্বেও এই শিল্পে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছি, ঠিক তেমনি এই সুযোগে অন্যান্য দেশ এই বাজার অনেকটা দখল করে নিয়েছে, ফলে এখন আমাদের এই কিছুটা হাতছাড়া হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্য লড়তে হচ্ছে অনেক বেশী৷

এই প্রেক্ষাপটে, আমাদের দেশে কম্পিউটার সায়েন্স বা এই ধরনের বিষয় নির্ভর আরেকটা যে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র, অর্থ্যাত্‍, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ডিজাইন ভিত্তিক শিল্প বিকাশের যে সুযোগ দ্রুতগতিতে তৈরী হচ্ছে ও দক্ষ পেশাজীবীদের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই বাজার স্থায়ীভাবে ধরে রাখা ও সম্প্রসারণের জন্য এখন থেকেই সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন, অন্যথায় দেরী হলে সফটওয়্যার শিল্পের মতই আন্তর্জাতিক বাজারের প্রবেশের ক্ষেত্রে এখানেও তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হবে৷

শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্র ও বিবেচ্য: হার্ডওয়্যার ডিজাইন ভিত্তিক শিল্পসম্ভাবনাকে তিনভাবে চিন্তা করা যেত পারে, প্রথমত: এমবেডেট সিস্টেম- যেটা মাইক্রোকন্ট্রোলার বা মাইক্রোপ্রসেসর ভিত্তিক হতে পারে, দ্বিতীয়ত: কম্পিউটারের সাথে ইন্টারফেস করা কন্ট্রোল বা এ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ হতে পারে এবং তৃতীয়ত: এএসআইসি (এপ্লিকেশন স্পেসিফিক ইন্টেগ্রেটেড সার্কিট) বা সিস্টেম-অন-এ-চিপ (এসওসি) পযর্ায়েও ডেভেলপমেন্ট হতে পারে৷

এমবেডেড সিস্টেম: এমবেডেড সিস্টেম হচ্ছে এমন একটা সিস্টেম যেখানে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এমবেডেড বা একইসাথে যুক্ত অবস্থায় থাকে, অর্থ্যাত্‍, এখানে সফটওয়্যারটিও হার্ডওয়্যারের একটি অংশ, সাধারণ একটি কম্পিউটারের ক্ষেত্রে যেমন কম্পিউটারটি কিনে সেখানে হার্ডডিস্কে ইচ্ছেমত সফটওয়্যার ইনস্টল করা যায়, সেখানে এমবেডেড সিস্টেমে সফটওয়্যারটি হার্ডওয়্যার হিসাবে বিল্ড-ইন থাকে৷ যেমন, ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার থেকে শুরু করে, ডিজিটাল ভোল্ট মিটার, যেকোন স্মার্ট ডিজিটাল ডিভাইস যা টিভি, গাড়ির, এসি, ফ্রিজ ইত্যাদির কোন স্মার্ট অংশ হতে পারে, সকল মোবাইল সেট, ডিজিটাল ক্যামেরা, ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিষ্টার, এছাড়াও আরও বড় বড় এ্যাপ্লিকেশন, যেমন, মেডিক্যাল ডায়াগনসিস মেশিনগুলো ইত্যাদি ইত্যাদি৷

বর্তমান বিশ্বে এমবেডেট সিস্টেম তৈরীর ব্যাপক চাহিদার অনুপাতে প্রয়োজনীয় দক্ষ পেশাজীবীর বড় ধরনের অভাব রয়েছে৷ ফলে এই নতুন বাজারটা করায়ত্ব করার জন্য প্রতিবেশী দেশসহ মধ্য ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো প্রয়োজনীয় দক্ষ পেশাজীবী তৈরীর পাশাপাশি সহায়ক শিল্পঅবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷

হার্ডওয়্যার ডিজাইন ভিত্তিক শিল্প স্থাপনার জন্য বা বিনিয়োগের জন্য শুরু থেকেই সঠিক ও সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনা নেয়া উচিত্‍৷ হার্ডওয়্যার ডিজাইন ও উত্‍পাদনের জন্য সঠিক প্রক্রিয়া ও স্বীকৃত লাইফ সাইকেল (ডেভেলপমেন্ট লাইফ সাইকেল) অনুসরণ না করে, অল্পসময়ে অধিক মুনাফা অর্জরের জন্য বিনিয়োগ করলে, তা এই শিল্পের স্থায়ী ভবিষ্যত্‍কে অনিশ্চিত করে তুলবে, তাছাড়া এভাবে তৈরী প্রোডাক্টের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বা বাজার কোনটাই পাওয়া যাবেনা৷

হার্ডওয়্যার ডিজাইন ভিত্তিক শিল্পে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়াগের জন্য শিল্প উদ্যোক্তাদের কয়েকটি বিষয় মনে রাখা জরুরী, প্রথমত: এমবেডেড সিস্টেম জিজাইন ও উত্‍পাদনের জন্য স্বীকৃত লাইফ সাইকেল (ডেভেলপমেন্ট লাইফ সাইকেল) অনুসরণ করতে হবে, এতে প্রথম প্রথম হয়তবা উত্‍পাদন ব্যয় বেশী পাবে, কিন্তু এর সুফল হবে দীর্ঘমেয়াদী, কেননা, ডেভেলপমেন্ট লাইফ সাইকেলের শেষ পর্যায়েও সফটওয়্যারের কোন বাগ বা ক্রটি যে পরিমান ব্যয়ে সংশোধন করা সম্ভব, কিংবা সফটওয়্যারটি ডেলিভারী দেয়ার পরও ঐ সফটওয়্যারের কোন বাগ সংশোধন বা ফিচারের কোন পরিবর্তন, যে পরিমাণ ব্যয়ে করা সম্ভব, হার্ডওয়্যার ডিজাইনের ক্ষেত্রে ডেভেলপমেন্ট লাইফ সাইকেলের শেষ পর্যায় এসে হার্ডওয়্যার ডিজাইনের কোন ত্রুটি সংশোধন বা এমবেডেড সফটওয়্যারটির কোন বাগ সংশোধন অনেক অনেক গুণ বেশী ব্যয়সাপেক্ষ, এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ প্রজেক্টাই প্রথম থেকে শুরু করতে হতে পারে৷ এছাড়াও এমবেডেড সফটওয়্যারটির আর্কিটেক্টচার প্রচলিত সফটওয়্যারের আর্কিটেক্টচার চেয়ে অনেক আলাদা, এবং তত্বীয়ভাবে এমবেডেড সফটওয়্যার বাগ শূন্য হিসাবেই ডেভেলপ করার চেষ্টা করা হয়৷ আবার অনেক ক্ষেত্রে (আরটিওএস বা রিয়েল টাইম অপারেটিং সিস্টেম) নামের বিশেষ ধরনের অপারেটিং সিস্টেমও ব্যবহার করা হয়৷ এসব নানাবিধ কারণে এমবেডেড সিস্টেম উত্‍পাদনের জন্য স্বীকৃত লাইফ সাইকেল অনুসরণ না করাটা বানিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বেশ ঝুকিপূর্ণ৷

তবে এমবেডেড সিস্টেমটি একবার নির্ভূলভাবে ডিজাইন ও তৈরী হয়ে গেলে, সেটির প্রয়োজনীয় আপগ্রেডেশন খুব অল্প ব্যয়সাপেক্ষেই করা সম্ভব, এছাড়াও ডিজাইনকৃত এমবেডেড সিস্টেমটির আংশিক বা সম্পূর্ন মডিউলটি আরো অনেক এমবেডেড অ্যাপ্লিকেশন তৈরীতে কজে লাগতে পারে, সেসবক্ষেত্রে উত্‍পাদন ব্যয় অনেক কমে যাবে৷ ফলে একটা অ্যাপ্লিকেশনের জন্য এমবেডেড সিস্টেম তৈরীর বিনিয়োগের চাইতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের পরিকল্পনা অনেক বেশী সঙ্গত ও লাভজনক৷ আসলে অল্পসময়ের জন্য অধিক মুনাফা অর্জনের চিন্তার চাইতে, দীর্ঘমেয়াদী সঙ্গত পরিমাণ ও স্থায়ী মুনাফা অর্জনের পরিকল্পনা দেশ ও জাতির জন্য অনেক বেশী মঙ্গলজনক৷ চায়না বা হংকং এর মত দেশগুলো সেজন্যে খুব অল্প খরচেই চাহিদা মোতাবেক নতুন বা আপগ্রেডেড হার্ডওয়্যার সরবরাহ করতে পারে৷

কম্পিউটার ইন্টারফেস: কম্পিউটারের সাথে ইন্টারফেস করা কন্ট্রোল বা এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের বাজারের ক্ষেত্রটা ব্যক্তিগত বা বাসাবাড়ির প্রয়োজন থেকে শুরু করে বড় বড় প্রতিষ্ঠান বা শিল্পকারখানার জন্য কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ইন্ডাষ্ট্রিয়াল অটোমেশন বা মনিটরিং বা সিকিউরিটি সিস্টেম এর মত অনেক কিছু হতে পারে, যেখানে কম্পিউটারের সাথে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় সেন্সর বা প্রয়োজন অনুসারে বিশেষ ধরনের ইনপুট ডিভাইস অথবা মেকানিকাল ডিভাইস ইন্টারফেস করা যেতে পারে, এই নিয়ন্ত্রণ বা মনিটরিং ব্যবস্থাটা স্থানীয়ভাবে একটা সার্ভার বা কম্পিউারের মাধ্যমেও হতে পারে আবার অনেকগুলো এলাকার জন্য দূরনিয়ন্ত্রিত সার্ভারের মাধ্যমেও হতে পারে৷ আবার যদি একই ধরনেরর কাজের জন্য বাজারের ব্যাপক চাহিদা থাকলে, তাহলে প্রয়োজনমত এমবেডেড সিস্টেমও জিজাইন করা যেতে পারে৷ তবে সাধারণভাবে এই কাজগুলো বিশেষায়িত (কাস্টমাইজড) হয়ে থাকে, ফলে বিদেশ থেকে এক্সপার্ট নিয়ে এসে এই ধরনের কাজ করাটা বেশ ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে৷ অন্যদিকে এনধরণের কাজে দেশীয় এক্সপার্ট তৈরী বা বিকশিত করতে না পারলে একসময় হয়ত এইসব কাজের জন্যই বিদেশীদের উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে হবে, ফলে ব্যয়জনিত কারণে আমাদের দেশের স্থানীয় বাজারও সঠিক মাত্রায় বিকশিত হবেনা, টেকনোলজি ব্যবহারেও আমাদের দেশ পিছিয়ে পড়বে, সাথে সাথে আমাদের দেশে এই বিষয়ের উপর দক্ষ পেশাজীবী তেমন তৈরী হবে না, এর ফলে আবার এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে অনুপ্রবেশের হারও আশানুরূপ হবে না৷ সঠিক পরিকল্পনা থাকলে বাংলাদেশের জন্য এই বাজারের সম্ভাবনাটাও অনেক বড়৷

এএসআইসি (এপ্লিকেশন স্পেসিফিক ইন্টেগ্রেটেড সার্কিট) বা সিস্টেম-অন-এ-চিপ (এসওসি): এবার আরেকটা ক্ষেত্র চিন্তা করা যাক, ধরা যাক যে একটি এ্যাপ্লিকেশন তৈরীর জন্য বিভিন্ন ধরনের ২০-৩০ টি ডিজিটাল আইসি বা চিপের প্রয়োজন পড়ছে, কোন সন্দেহ নেই যে যদি ঐ ২০-৩০ টি ডিজিটাল আইসি বা চিপের পরিবর্তে একটি চিপে বা আইসির (এএসআইসি) মধ্যে ঐ এ্যাপ্লিকেশনটি বাজারজত করা যেত, তাহলে প্রোডাক্টির উত্‍পাদন ব্যয় অনেক কমে যেত, প্রোডাক্টির আয়তনও হ্রাস পেত, এনার্জি সোর্স বা ব্যাটারীর স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি পেত, ফলে ক্রেতাদের কাছে প্রোডাক্টির গ্রহণযোগ্যতা অনেক বৃদ্ধি পেত৷ একটা সময় ছিল যখন এই ধরনের চিপ বা এএসআইসি ডিজাইন করাটা খুবই কঠিন কাজ ছিল, কিন্তু বর্তমানে বিশেষ ধরনের সফটওয়্যারের মাধ্যমে হার্ডওয়্যার ডিসক্রিপশন ল্যাঙ্গুয়েজ (এইচডিএল) ব্যবহার করে অনেক সহজেই কাজটা করা যায়৷ আজ এইচডিএল বড় বড় বা জটিল হার্ডওয়্যার ডিজাইন বা বর্ণনা করার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে৷ অর্থাত্‍, এইচডিএল দিয়ে যে শুধু ডিজাইনকৃত জটিল হার্ডওয়্যার বর্ণনা করা যাবে তাই না, হাই লেভেল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এর মত লুপ বা কন্টোল স্টেটমেন্ট ব্যবহার করে প্রসেসর এর মত জটিল চিপকেও বর্ননা করা যাবে৷ এমনকি, এইচডিএল-এ বর্ণনাকৃত হার্ডওয়্যার বা প্রসেসরটি যদি সিমুলেশন ও সিন্থেসিস পর্যায়ে সঠিক কার্যকারিতা প্রদর্শন করতে পারে, তাহলে শুধু ঐ এইচডিএল কোডটিই চিপ উত্‍পাদন করে এমন ইন্ডাষ্ট্রির কাছে বিক্রয় করার সুযোগ রয়েছে৷ ফলে এদেশের শিল্প উদ্যোক্তারা, ডিজিটাল আইসি বা চিপ উত্‍পাদন করে এমন কোম্পানীগুলোর সাথে যৌথবিনিয়োগের কথা চিন্তা করতে পারে যেখানে স্থানীয় পর্যায় থেকে বিভিন্ন হার্ডওয়্যারের এইচডিএল কোড ডেভেলপ ও সরবরাহ করা হবে, অর্থাত্‍ দেশে আইসি ইন্ডাষ্ট্রির না থাকা সত্বেও আইসি উত্‍পাদন প্রক্রিয়ার একটি বড় অংশ এদেশ থেকেই বাণিজ্যিকভাবে করা সম্ভব৷ এছাড়াও এইচডিএল দিয়ে এফপিজিএ (ফিল্ড প্রোগ্রামাবল গেইট অ্যারে) প্রোগ্রাম করাও যায়, সেটারও বাণিজ্যিক ব্যবহারের চিন্তা করার অবকাশ রয়েছে৷

ইন্ডাষ্ট্রি ও বিশ্ববিদ্যালয়: আমাদের দেশে ইন্ডাষ্ট্রিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেকটা রেডিমেট দক্ষ পেশাজীবী আশা করে, তবে এরকম আশা করাটা বাস্তবসম্মত না, কারণ সাধারণ ছাত্রছাত্রী সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল দায়িত্ব হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের একটা ভিত্তি তৈরী করে দেয়া, যাতে পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের যেকোন ক্ষেত্রে তারা দক্ষ পেশাজীবী হতে পারে৷ তবে বিশেষ ক্ষেত্রে দক্ষ পেশাজীবী তৈরী করতে চাইলে অবশ্যই বিশেষ ভাবেই চিন্তা করতে হবে৷ ইন্ডাষ্ট্রি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বোঝাপড়ার দূরত্ব যত কম হবে, দক্ষ পেশাজীবীও তত বেশী তৈরী হবে, এক্ষেত্রে ইন্ডাষ্ট্রিগুলো কিছু আগাম সহযোগিতা করতে পারে, যেটা উন্নতবিশ্বের ইন্ডাষ্ট্রিগুলো করে থাকে, উন্নতবিশ্বে ইন্ডাষ্ট্রিগুলোর আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ইন্ডাষ্ট্রিগুলোর চাহিদা মোতাবেক প্রোডাক্ট তৈরীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক বড় বড় গবেষণামূলক প্রজেক্ট থাকে, ফলে সেখানে প্রোডাক্টও যেমন তৈরী হয়, তেমনি আবার দক্ষ পেশাজীবীও তৈরী হয়৷

সরকারী উদ্যোগ: হার্ডওয়ার ডিজাইন ভিক্তিক পেশাজীবী তৈরী ও স্থানীয় বাজার সৃষ্টি ও সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে অনুপ্রবেশের সুযোগ তৈরীর ক্ষেত্রে সরকারী উদ্যোগ ও ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ তাছাড়া, শুধুমাত্র সরকারী ক্ষেত্রেই স্থানীয়ভাবে এর একটা বিশাল বাজার রয়েছে, যেমন, সরকারী প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের প্রিপেইড মিটার, সরকারী গাড়ী, ট্রেন, বাস থেকে শুরু করে তেলসহ অন্যান্য সরকারী সম্পদ ও সরকারী অফিসসমূহে কম্পিউটার বা এমবেডেড সিস্টেম নিয়ন্ত্রিত মিনিটরিং, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রচলন ইত্যাদি ইত্যাদি৷ এছাড়াও সরকার সরাসরি তাদের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে সরকারী ব্যবস্থাপনায় সরকারের প্রয়োজন অনুসারে এইসব সিস্টেম তৈরী করে দেয়ার দায়িত্ব দিতে পারে৷ এতে করে একদিকে যেমন সরকার সাশ্রয়ীঅর্থে চাহিদা মোতাবেক প্রোডাক্ট তৈরী করে নিতে পারবে, অন্যদিকে আবার এর ফলে এসব প্রোডাক্টের জন্য স্থানীয় বাজারও তৈরী হবে, এত করে দক্ষ পেশাজীবীও তৈরী হবে আর আন্তর্জাতিক ত্রেতাদের আস্থা অর্জন করাও সম্ভব হবে, ফলে আন্তর্জাতিক বাজারও তৈরী হবে, শেষপর্যায়ে এইসব ক্ষেত্রে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরাও আকৃষ্ট হবে৷

ছাত্রছাত্রীদের প্রস্তুতি: হার্ডওয়ার ডিজাইন ভিক্তিক পেশার ক্ষেত্রে যেসব ছাত্রছাত্রী নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী, তাদের অবশ্যই শুরু থেকেই ইলেক্ট্রনিক্স, বিশেষত: ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক্স ও মাইক্রোপ্রসেসর বিয়য়ে এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এ ভাল দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করতে হবে৷ ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক্স বা মাইক্রোপ্রসেসর সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা ছাড়া যেমন হার্ডওয়্যার ডিজাইন করাও যাবেনা, ঠিক তেমনি আবার কোন হার্ডওয়্যার-এর জন্য মানসম্মত সফটওয়্যার ডেভেলপ করাটাও প্রায় অসম্ভব৷ এছাড়াও এমবেডেড সিস্টেমের জন্য বিশেষাযিত সফটওয়্যার ডেভেলপ করার জন্য প্রোগ্রামিং-এ আারও বিশেষ দক্ষতা থাকা প্রয়োজন৷ ফলে উপরোক্ত বেসিক কোর্সসমূহে দক্ষতা অর্জন ছাড়াও ইন্টারফেকসিং, এমবেডেড সিস্টেম, রিয়েল অপারেটিং সিস্টেম, হার্ডওয়্যার ডিসক্রিপশন ল্যাঙ্গুয়েজ, মাইক্রোকন্ট্রোলার বা মাইক্রোপ্রসেসর, এফপিজিএস ইত্যাদির উপর এডভান্স কোর্সগুলোও যতটুকু সম্ভব আয়ত্ব করা উচিত৷

শেষ কথা: আরেকটা বিষয় ভেবে দেখবার আছে, সেটা হল, অন্যের ডিজাইন করা হার্ডওয়্যারের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীলতা আমাদের মত গরীব দেশের অর্থনীতির জন্য কতটা মঙ্গলজনক, যেমন, আজ যদি কেও বলেন যে উনার কম্পিউটারের কোন একটা কার্ড পাল্টাতে হবে, কারণ, ঐ পুরাতন কার্ডের সাথে নতুন অপারেটিং সিস্টেম বা নতুন সফটওয়্যারটি চলবেনা, তখন উনাকে সাথে সাথে বাজারে গিয়ে নতুন একটা কার্ড কিনে আনতে হবে, আবার যদি বলেন যে কোন একটা পুরাতন সফটওয়্যার চলবেনা কোন নতুন মেশিনের সাথে, তখন আবার নতুন সফটওয়্যার কিনতে হবে, হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যারের এই আপগ্রেডেশন আসলেই সাধারণ ব্যবহারকারীদের বা আমাদের দেশের জন্য প্রয়োজন ছিল কিনা বা আছে কিনা, নাকি বড় বড় কোম্পনীগুলো শুধুমাত্র তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থে কৌশলে সাধারণ ব্যবহারকারীদেরকে তাদের নতুন নতুন প্রোডাক্ট কিনতে বাধ্য করছে, সেটা ভাবার সুযোগই আমাদের নেই, কেননা আমার কাছে তার কোন বিকল্পই নেই, আর দেশেও এই পর্যায়ের কাজের সুযোগও সীমিত৷ এ সমস্যাটা শুধু কম্পিউটারের জন্য নয়, এটা যেকোন প্রোগ্রামেবল মেশিনের জন্যও প্রযোজ্য, হতে পারে সেটা সাধারণ কোন ডিজিটাল প্রিপেইড ইলেকট্রিক মিটার কিংবা মেডিক্যাল চেকআপের বড় বড় যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ইত্যাদি৷ আজ মুক্ত সফটওয়্যার-আন্দোলন সফটওয়্যারের সমস্যার কিছুটা সমাধান দিলেও, হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে বড় বড় কোম্পনী বিদেশীদের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার চিন্তা ভাবনা এখন থেকেই শুরু করা উচিত৷

1 comment:

  1. অবশ্যই এটা আমাদের জন্য একটি গর্বের বিষয় যে উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতেও সফলতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। HMBR Tools & Chemicals Ltd তাদের মধ্যে একজন। তবে দেশের সর্ব পর্যায়ের মানুষের কাছে এই হার্ডওয়্যার পণ্যগুলো পৌঁছে দিতে এবং অনলাইনে হার্ডওয়্যার পণ্যগুলো সহজলভ্য করতে সকলের কাজ করা উচিৎ। ধন্যবাদ , fixit.com.bd কে আমাদের অনলাইনের মাধ্যমেই এইসকল উন্নত হার্ডওয়্যার পণ্যগুলো ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

    ReplyDelete